বিষয়বস্তুতে চলুন

পিরোজপুর জেলা

স্থানাঙ্ক: ২২°৩৪′৪৮″ উত্তর ৮৯°৫৮′১২″ পূর্ব / ২২.৫৮০০০° উত্তর ৮৯.৯৭০০০° পূর্ব / 22.58000; 89.97000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পিরোজপুর
জেলা
উপরে: মোমিন মসজিদ
নিচে: বৈঠককাঠা গ্রামে ভাসমান মাঠ
বাংলাদেশে পিরোজপুর জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে পিরোজপুর জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৪′৪৮″ উত্তর ৮৯°৫৮′১২″ পূর্ব / ২২.৫৮০০০° উত্তর ৮৯.৯৭০০০° পূর্ব / 22.58000; 89.97000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগবরিশাল বিভাগ
সরকার
 • জেলা প্রশাসকমোহাম্মদ জাহেদুর রহমান
আয়তন
 • মোট১,২৭৭.৮০ বর্গকিমি (৪৯৩.৩৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২[১])
 • মোট১১,৯৮,১৯৫
 • জনঘনত্ব৯৪০/বর্গকিমি (২,৪০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৪.৩১ %
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
১০ ৭৯
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

পিরোজপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।[২]

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

জেলার সীমানা

পিরোজপুরের উত্তরে বরিশাল জেলাগোপালগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে ঝালকাঠি জেলাবরগুনা জেলা এবং পশ্চিমে বাগেরহাট জেলাসুন্দরবন অবস্থিত। পশ্চিমে বলেশ্বর নদী পিরোজপুরকে বাগেরহাটের সাথে বিভাজিত করেছে।[৩]

অবস্থান

পিরোজপুর জেলা বিষুব রেখার ২২.৩০’ থেকে ২২.৫২ উত্তর আক্ষাংশে এবং ৮৯.৫২ থেকে ৯০.১৩ দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। পিরোজপুর জেলা মূলত সমতল ভূমি এবং মূল ভূখন্ড সমুদ্র সমতল থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ১০ফুট থেকে ১৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।[৩]

জলবায়ু

এখানে ডিসেম্বরের শেষে জানুয়ারির মধ্যভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৯৯০ মিলিমিটার। জলবায়ু মূলত নাতিশীতোষ্ণ।[৩]

নামকরণ[সম্পাদনা]

কারো কারো মতে, সুবেদার শাহ সুজার দ্বিতীয় পুত্র ফিরোজ শাহ এই এলাকায় মারা যান এবং এলাকাটি পরবর্তীকালে 'ফিরোজপুর' নামে পরিচিতি লাভ করে। কালক্রমে 'ফিরোজপুর' উচ্চারণ পরে ধীরে ধীরে 'পিরোজপুর' নামে পরিণত হয়।[৪]

ভূগোল[সম্পাদনা]

এ অঞ্চলের বেশিরভাগ জমি নিচু এবং মাটি উর্বর। ছোট ছোট জঙ্গল আছে। নেছারাবাদ উপজেলা ব্যবসা কেন্দ্র এবং সেখানে বেড়ে ওঠা সুন্দরী গাছের (এক ধরণের ম্যানগ্রোভ) জন্যও পরিচিত।

নদ-নদী[সম্পাদনা]

গাবখান নদী, বলেশ্বর নদী, দামোদর নদ, কচা নদী, পোনা নদী, কোচাখালী নদী, কালীগঙ্গা নদী, সন্ধ্যা নদী, দোরাটানা নদী সহ প্রভৃতি বড় নদী ও পরিচিত নদী রয়েছে এ উপজেলায়।

সুন্দর বনের পূর্বদিকে অবস্থিত বলেশ্বর নদী দুই ভাগে বিভক্ত হলেও দিন দিন ছোট থেকে ছোট হয়ে আসছে। একটি ডোরাটানা নামে পরিচিত যা বাগেরহাটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং অন্যটি কাচা নামে পরিচিত যা ভান্ডারিয়া দিয়ে প্রবাহিত হয়। তারপরে এর একটি শাখা বালেশ্বর রয়েছে যা পরে দোরতানার সাথে মিলিত হয় এবং নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গার কাছে কালীগঙ্গায় পতিত হয়। আর কচা কালীগঙ্গা ও সন্ধ্যা নদী দুটি নদীতে বিভক্ত হয়েছে। কালীগঙ্গা উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে বলেশ্বরের সাথে মিলিত হয় এবং আরও উত্তরে প্রবাহিত হয়। এবং সন্ধ্যা নদী পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। পরে সন্ধ্যা নদী আড়িয়াল খাঁ নদের সাথে মিলিত হয়ে মেঘনায় পতিত হয়।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ[সম্পাদনা]

পিরোজপুর জেলা ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ৫৪টি ইউনিয়ন ও ৩টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

উপজেলাসমূহ[সম্পাদনা]

পিরোজপুর জেলায় মোট ৭টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো:

ক্রম নং উপজেলা আয়তন
(বর্গ কিলোমিটারে)
প্রশাসনিক থানা আওতাধীন এলাকাসমূহ
০১ ইন্দুরকানী ৯৪.৬০ ইন্দুরকানী ইউনিয়ন (৫টি): পাড়েরহাট, পত্তাশি , বালিপাড়া, ইন্দুরকানী সদর এবং চণ্ডিপুর[৫][৬]
০২ কাউখালী ৭৯.৫৬ কাউখালী ইউনিয়ন (৫টি): সয়না রঘুনাথপুর, আমড়াজুড়ি, কাউখালী সদর, চিরাপাড়া এবং শিয়ালকাঠী
০৩ নাজিরপুর ২২৮.৬৯ নাজিরপুর ইউনিয়ন (৯টি): মাটিভাঙ্গা, মালিখালী, দেউলবাড়ী দোবড়া, দীর্ঘা, শাখারীকাঠী, নাজিরপুর সদর, সেখমাটিয়া, শ্রীরামকাঠী এবং কলারদোয়ানিয়া
০৪ নেছারাবাদ ২০০.৩৩ নেছারাবাদ পৌরসভা (১টি): স্বরূপকাঠী
ইউনিয়ন (১০টি): বলদিয়া, সোহাগদল, স্বরূপকাঠী, আটঘর কুড়িয়ানা, জলাবাড়ী, দৈহারী, গুয়ারেখা, সমুদয়কাঠী, সুটিয়াকাঠী এবং সারেংকাঠী
০৫ পিরোজপুর সদর ১৬৬.৮২ পিরোজপুর সদর পৌরসভা (১টি): পিরোজপুর
ইউনিয়ন (৭টি): শিকদার মল্লিক, কদমতলা, দুর্গাপুর, কলাখালী, টোনা, শরিকতলা এবং শংকরপাশা
০৬ ভাণ্ডারিয়া ১৬৩.৫৭ ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা (১টি): ভাণ্ডারিয়া
ইউনিয়ন (৭টি): ভিটাবাড়িয়া, নদমূলা শিয়ালকাঠী, তেলিখালী, ইকড়ী, ধাওয়া, ভাণ্ডারিয়া সদর এবং গৌরীপুর
০৭ মঠবাড়িয়া ৩৪৪.২৪ মঠবাড়িয়া পৌরসভা (১টি): মঠবাড়িয়া
ইউনিয়ন (১১টি): তুষখালী, ধানীসাফা, মিরুখালী, দাউদখালী, মঠবাড়িয়া, টিকিকাটা, বেতমোর রাজপাড়া, আমড়াগাছিয়া, শাপলেজা, হলতা গুলিশাখালী এবং বড় মাছুয়া

সংসদীয় আসন[সম্পাদনা]

সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৭] সংসদ সদস্য[৮][৯][১০][১১][১২] রাজনৈতিক দল
১২৭ পিরোজপুর-১ নাজিরপুর উপজেলা, ইন্দুরকানি উপজেলা এবং পিরোজপুর সদর উপজেলা শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১২৮ পিরোজপুর-২ কাউখালী উপজেলা, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা এবং নেছারাবাদ স্বরূপকাঠী উপজেলা মহিউদ্দিন

মহারাজ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১২৯ পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া উপজেলা রুস্তম আলী ফরাজী জাতীয় পার্টি

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

এখানকার গ্রামীণ মানুষের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। এছাড়াও আয়ের অন্যান্য উৎস রয়েছে যা মূলত শহর ভিত্তিক। সেগুলি নীচে দেওয়া হলো:

  • কৃষি ৫০.৮২%
  • বাণিজ্য ১৮.৭১%
  • সেবা ৭.৬৯%
  • অকৃষি চাষ ৫.৭৫%
  • পরিবহন ও যোগাযোগ ২.১৬%,
  • ধর্মীয় সেবা ১.৬১%
  • নির্মাণ ১.৩৬%
  • ভাড়া ও রেমিটেন্স ০.৯৫%
  • শিল্প ০.৭৮%
  • অন্যান্য ১০.১৭%

কৃষি পণ্য[সম্পাদনা]

ধান, পাট, আখ, গম, পেয়ারা, কলা, নারিকেল, বরই, পান, সুপারি এখানকার প্রধান কৃষি পণ্য।[১৩]

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.ব.প্র. ±%
১৯৭৪ ৮,২৩,৭৮৭—    
১৯৮১ ৯,৪৭,৪২০+২.০২%
১৯৯১ ১০,৬৩,১৮৫+১.১৬%
২০০১ ১১,১১,০৬৮+০.৪৪%
২০১১ ১১,১৩,২৫৭+০.০২%
২০২২ ১১,৯৮,১৯৫+০.৬৭%
Sources:[১][১৪]

বাংলাদেশের ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর জেলার মোট পরিবার ২৯৮,৪৯০টি এবং জনসংখ্যা ১,১৯৮,১৯৫ জন। এবং তারমধ্যে ২১৮,৬৬০ জন (১৮.২৫%) ১০ বছরের কম বয়সী। জনসংখ্যা ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ৯৩৮ জন ছিলো। পিরোজপুর জেলার সাক্ষরতার হার (৭ বছর বা তার বেশি বয়সী) ৮৫.৫৩%, যেখানে জাতীয় গড় ৭৪.৮০% এবং লিঙ্গ অনুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে ১০৫৬ জন মহিলা। জনসংখ্যার ১৯.৯৮% শহুরে এলাকায় বসবাস করত।[১]

ধর্ম[সম্পাদনা]

পিরোজপুর জেলার ধর্ম (২০২২)[১]
ধর্ম শতাংশ
ইসলাম
  
৮৪.৮৮%
হিন্দুধর্ম
  
১৫.১০%
অন্যান্য
  
০.০২%
বর্তমান পিরোজপুর জেলার ধর্মবিশ্বাস
ধর্ম জনসংখ্যা (১৯৪১)[১৫]:১০০–১০১ শতকরা (১৯৪১) জনসংখ্যা (২০২২)[১] শতকরা (২০২২)
ইসলাম ৩৮৮,০০০ ৬০.২৩% ১,০১৬,৯৮৫ ৮৪.৮৮%
হিন্দুধর্ম ২৫৫,৭৪৮ ৩৯.৭০% ১৮০,৯৮০ ১৫.১০%
অন্যান্য ৪৭৭ ০.০৭% ২৩০ ০.০২%
মোট জনসংখ্যা ৬৪৪,২২৫ ১০০% ১,১৯৮,১৯৫ ১০০%

একটি বৃহৎ হিন্দু সংখ্যালঘু সহ এই জেলায় ইসলাম প্রধান ধর্ম। তবে বরিশাল বিভাগের অন্যান্য জেলার মতো ২০০১-২০১১ সময়কালে সংখ্যালঘু হিন্দু জনসংখ্যা কেবল তাদের অংশই নয়, তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। নাজিরপুর উপজেলায় হিন্দুদের হার বৃহত্তম এবং ইন্দুরকানী উপজেলায় সর্বনিম্ন।

এ জেলায় ৩,০৮৭টি মসজিদ এবং ১,০৫১টি মন্দির রয়েছে।[১৬]

পরিবহন[সম্পাদনা]

বাস[সম্পাদনা]

পিরোজপুরে দুটি বাস টার্মিনাল রয়েছে, পিরোজপুর বাস টার্মিনাল এবং পিরোজপুর পুরাতন বাস টার্মিনাল। অনেক বাস কোম্পানি পিরোজপুরকে ঢাকার মতো অন্যান্য জেলার সাথে সংযুক্ত করে।

নদীপথ[সম্পাদনা]

নদীতে যাতায়াতের জন্য লঞ্চ, স্টিমার ও নৌকা ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় বন্দরটি হুলারহাট লঞ্চ স্টেশন (ঘাট) নামে পরিচিত যা পিরোজপুরের প্রাথমিক বন্দর হিসাবে কাজ করে। এটি পিরোজপুর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এবং নদী বন্দরটি কালীগঙ্গার উপর অবস্থিত। পাশেই স্টিমার ঘাট। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করে এখান থেকে।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর জেলার সাক্ষরতার হার ৬৪.৯%।[১৭]

ভাষা ও সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

পিরোজপুরের ভাষা ও সংস্কৃতির ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ। বরিশাল ও খুলনার মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় এই দুই অঞ্চলের ভাষার দ্যোতনা পরিলক্ষিত হয় পিরোজপুরের ভাষায়। তবে পিরোজপুরের কোনো আঞ্চলিক ভাষা নেই, নেই কোন বিশেষ ভাষা-ভাষী গোষ্ঠী। প্রবাদ প্রবচন ও বিয়ের গানের জন্য পিরোজপুর বিখ্যাত। বর্তমানে উদীচি শিল্পী গোষ্ঠী, দিশারী শিল্পী গোষ্ঠী, সংগীতা, ধ্বনি শিল্পী গোষ্ঠী, রুপান্তর নাট্য গোষ্ঠী, পিরোজপুর থিয়েটার, কৃষ্ণচুড়া থিয়েটার প্রভৃতি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আঞ্চলিক ঐতিহ্য লালন পালন ও প্রচারে একাগ্র প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।[১৮]

মুক্তিযুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ রের্সকোর্স ময়দানে 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' এবং 'ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো' ঘোষণার পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো তৎকালীন পিরোজপুরের মহকুমার প্রতিটি গ্রামে গড়ে ওঠে প্রতিরোধের দূর্গ। শত্রুর বিরুদ্ধে ৩ মার্চ বিকালে ঢাকা থেকে আগত সামসুল হক (এম.এন.এ-মঠবাড়ীয়া), ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুক ও আওয়ামীলীগ নেতা বদিউল আলমের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা পিরোজপুরে পাকিস্তানি পতাকায় অগ্নিসংযোগ করতে করতে মিছিল সহকারে শহর প্রদক্ষিণ করে। এর আগে ২ মার্চ ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) শহরে বাঁশের লাঠি ও ডামি রাইফেল নিয়ে সদর রাস্তায় সকল দিকে সুশৃঙ্খল মহড়া প্রদর্শন করলে পথচারী জনসাধারণ করতালি দিয়ে তাঁদের অভিনন্দন জানায়। ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুক ২৩ মার্চ শত শত জনতার উপস্থিতিতে স্থানীয় টাউন হল মাঠের শহীদ মিনারে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়িয়ে দেন। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বরিশাল থেকে নূরুল ইসলাম মঞ্জুর টেলিফোনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা পিরোজপুরে পাঠান। এসময় পিরোজপুরে আওয়ামীলীগের নির্বাচিত এম.এন.এ (মেম্বর অব ন্যাশনাল এসেম্বলি) ছিলেন এ্যাডভোকেট এনায়েত হোসেন খান। ২৬ মার্চ বিকেলে পিরোজপুর টাউনহল ময়দানের জনসভায় অস্ত্র সংগ্রহের আবেগময় ও নির্দেশনামূলক আহবান জানালে এ্যাডভোকেট এনায়েত হোসেন খান, ডাঃ আব্দুল হাই, ডাঃ ক্ষিতীষ চন্দ্র মন্ডল, এ্যাডভোকেট আলী হায়দার খান, ফজলুল হক খোকন, জামালুল হক মনু প্রমূখ স্বাধীনাতা প্রেমী জনতা টাউন হলের অদূরে পিরোজপুর মহকুমা প্রশাসকের অফিস সংলগ্ন অস্ত্রাগারটি আক্রমণ করে সমস্ত রাইফেল, বুলেট সংগ্রহ করেন নেয়। ১৯ মে ১৯৭১ অস্ত্রাগারের আর.এস.আই. গোলাম মাওলা বাদী হয়ে পিরোজপুর থানায় ৫৫ জনকে আসামী করে এই ৫নং মামলা দায়ের করেন।[১৯]

২১ মার্চ ১৯৭১[সম্পাদনা]

২১ মার্চ লাহোর থেকে পিরোজপুরে আসেন পিরোজপুরের সন্তান লেঃ জিয়াউদ্দিন। ২৭ মার্চ বিকাল ৪টা থেকে পিরোজপুর সরকারী হাইস্কুল মাঠে তাঁর প্রচেষ্টায় মুক্তিফৌজ গঠন পূর্বক অস্থায়ীভাবে গঠিত বিপ্লবী সরকারের স্থানীয় প্রধান এ্যাডভোকেট এনায়েত হোসেন খান এম.এন.এ-কে গার্ড অব অনার প্রদান করে। জনাব এনায়েত হোসেন খান (এ্যাডভোকেট), ডাঃ আঃ হাই, আলী হায়দার খান (এ্যাডভোকেট), ডাঃ ক্ষিতীশ চন্দ্র মন্ডল, এই চারজন উচু পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা হিসাবে পিরোজপুর মহকুমার মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন এবং দিক নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[১৯]

৪ মে ১৯৭১[সম্পাদনা]

৪ মে পিরোজপুরে প্রথমে হানাদার পাকবাহিনী প্রবেশ করে। হুলারহাট থেকে শহরে প্রবেশের পথে তারা মাছিমপুর আর কৃষ্ণনগর গ্রামে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হিন্দু আর স্বাধীনতার পক্ষের মুসলমানদের বাড়িঘরে দেয়া হয় আগুন, হত্যা করা হয় অসংখ্য মানুষ।[১৯]

৬ মে ১৯৭১[সম্পাদনা]

৬ মে রাজাকারদের সহায়তায় পিরোজপুরের তৎকালীন এস.ডি.ও (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রাজ্জাক (কুমিল্লা), ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান (নড়াইল), এস.ডি.পি.ও ফয়জুর আহমেদ (ময়মনসিংহ) কে গুলি করে হত্যা করা হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পিরোজপুরের অদূরে চালিতাখালী গ্রাম থেকে এক দড়িতে বেধে আনা হয় মোসলেম আলী শেখ, আব্দুর রহমান সরদার, খাউলবুনিয়ার আব্দুল গফফার মাস্টার, জলিল হাওলাদার, জুজখোলার সতীশ মাঝি এবং শামছু ফরাজীসহ ১২ জন স্বাধীনতাকামীকে। তাঁদেরকে বলেশ্বরের বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।[১৯]

৮ ডিসেম্বর ১৯৭১[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টায় তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমা শহর শত্রুমুক্ত হয় এবং সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের। পিরোজপুরের ঘরে ঘরে উত্তোলিত হয় বিজয়ের পতাকা।[১৯]

সেক্টর ৯ নম্বর
সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ জলিল
সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ
স্মৃতিস্তম্ভের সংখ্যা ৯ টি
মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৬৬০ জন (প্রায়)
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬১ জন (জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার)
উল্লেখযোগ্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আঃ রাজ্জাক (এস.ডি.ও), ফয়জুর রহমান আহমেদ (এস.ডি.পি.ও), হীরেন্দ্র মহাজন, ফজলুল হক খোকন, সাইফ মিজানুর রহমান (ম্যাজিস্ট্রেট), ওমর ফারুক (সভাপতি মহকুমা ছাত্রলীগ), ভাগিরথী সাহা, সামছুল হক, ড. আবুল খায়ের, গণপতি হালদার, শ্রী ললীত কুমার বল, ড. জোতির্ময় গুহঠাকুরতা, জহিরুদ্দিন বাহাদুর প্রমুখ।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা (জীবিত) এ.কে.এম.এ আউয়াল, মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ (মৃত), এ্যাড: এম.এ মান্নান, গৌতম রায় চৌধুরী, এম.এ রব্বানী ফিরোজ, এমডি লিয়াকত আলী শেখ বাদশা (মৃত) প্রমুখ।
মুক্তিফৌজ গঠন ২৭ মার্চ ১৯৭১ বিকাল ৪ টা, পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুল মাঠ
পিরোজপুর অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ১৯ মে ১৯৭১
পিরোজপুর শত্রুমুক্ত দিবস ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

কুড়িয়ানা, পিরোজপুরে ভাসমান বাজার
  • ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক
  • কুড়িয়ানা ভাসমান বাজার
  • কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান
  • হরিণপালা রিভার ভিউ ইকোপার্ক
  • রায়েরকাঠি রাজবাড়ি
  • শাপ্লেজা কুঠিবাড়ি

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Population and Housing Census 2022 National Report (পিডিএফ)1Bangladesh Bureau of Statistics। নভেম্বর ২০২৩। 
  2. Nupu, Ranjan Baksi (২০১২)। "Pirojpur District"Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A.। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh 
  3. "ভৌগলিক পরিচিতি"। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২৪ 
  4. "পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস" 
  5. "ইন্দুরকানী উপজেলা পেল নতুন দুই ইউনিয়ন |ইন্দুরকানী সদর"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২০ 
  6. "ইন্দুরকানী উপজেলা পেল নতুন দুই ইউনিয়ন | চন্ডিপুর ইউনিয়ন"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২০ 
  7. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd 
  8. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  9. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  10. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  11. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  12. "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  13. "Natural Assets in Pirojpur"। ২৮ আগস্ট ২০১৯। 
  14. "Bangladesh Population & Housing Census-2011, Zila Report: Pirojpur" (পিডিএফ)Bangladesh Bureau of Statistics 
  15. "Census of India, 1941 Volume VI Bengal Province" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০২২ 
  16. "Pirojpur District at a glimpse"। ২৮ আগস্ট ২০১৯। ২৮ মে ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০২৪ 
  17. "পিরোজপুর জেলা"। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২৪ 
  18. "ভাষা ও সংস্কৃতি"। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২৪ 
  19. "মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা"। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২৪ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]