বিষয়বস্তুতে চলুন

ভানুবিল কৃষক প্রজা আন্দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুদ্রণযোগ্য সংস্করণটি আর সমর্থিত নয় এবং এতে রেন্ডারিং ত্রুটি থাকতে পারে। দয়া করে আপনার ব্রাউজারের বুকমার্কগুলি হালনাগাদ করুন এবং এর পরিবর্তে দয়া করে ব্রাউজারের মুদ্রণ করার ফাংশনটি ব্যবহার করুন।

দুশো বছরের ব্রিটিশ অপশাসন, দমন পীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস এবং জমিদারের শোষণ ও নির্যাতনের বিরোদ্ধে এ আন্দোলন। এর থেকে মুক্তির ইতিহাস হল ভানুবিল (মৌজা) কৃষক প্রজা আন্দোলন। ভানুবিল মৌজার মোট জনসংখ্যা ছিল নয় হাজার এবং মোট ভূমির পরিমান ছিল পনেরো হাজার একর। ঘটনার শুরু পৃত্থিমপাশার নবাব আলী আমজাদ খাঁ এর সময়। আর বিস্ফোরণ তার ছেলে নবাব আলী হায়দার খাঁ এর সময়। তখন জমিদারের নায়েব রাজবিহারী দাস ভানুবিল মৌজায় খাজনা উত্তোলন করতেন। অসৎ নায়েব প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা নিয়ে কোন রশিদ প্রদান করতেন না। সরল কৃষকরা ভাবতো তাদের প্রদত্ত খাজনা সরাসরি হিসাব বহিতে উঠানো হবে। পরবর্তীতে বকেয়া খাজনা প্রদানের জন্য সমন জারি হলে তারা বুঝতে পারে তারা প্রতারিত হয়েছে। নায়েবের এ প্রতারণার বিরোদ্ধে সংঘটিত প্রতিবাদের ফল হচ্ছে ভানুবিল (মৌজা) কৃষক প্রজা আন্দোলন। এ আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন পঞ্চানন শর্মা, বৈকুণ্ঠনাথ শর্মা,রূপচান সিংহ, গিরীন্দ্র সিংহ,কাশেম আলী এবং মহিলা নেত্রী লীলাবতী ও যোবেদা খাতুন প্রমুখ।

১৯৩২ সালের অগ্রহায়ণ মাসে আড়াই হাজার সৈন্য এবং ১০টি হাতি নিয়ে ভানুবিল মৌজায় মানুষ মারার তান্ডবলীলায় নেমেছিল তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদের দালাল পৃত্থিমপাশার জমিদার। এতে তছনছ হয়ে যায় ভানুবিল মৌজা। জমিদারের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠে বিদ্রোহী প্রজারা।

ভানুবিল (মৌজা) কৃষক প্রজা আন্দোলনের রেশ পুরো উপমহাদেশ ছেড়ে ইউরোপেও প্রভাব ফেলেছিল। এর পরে এসেছিল আরেক রাজনৈতিক চেতনা - সামন্ত সমাজ ভেঙ্গে পুজিঁবাদী সমাজ গড়ে উঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্ষালে পাস করা হয় সিলেট প্রজাস্বত্ত্ব আইন। এতে ক্ষেপে উঠে বিদ্রোহীরা।

১৭৮৯ সালের ফরাসী বিপ্লবের ভেতর দিয়ে পুজিঁবাদি সমাজের যে করাল গ্রাস নেমেছিল পৃথিবীতে তার প্রভাব পড়ে মণিপুরী সমাজেও। সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার আদর্শে জ্বলে উঠে প্রজা, শ্রমিক মালিক। পৃথিবীতে শাসনের রুপরেখা পাল্টে যায়। সভ্যতার ইতিহাসে আসে আচানক এক পরিবর্তন।

ইতিহাস

ভানুবিল (মৌজা) কৃষকপ্রজা আন্দোলন কমলগঞ্জের আদমপুরের ভানুবিল মৌজায় সংঘটিত একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বাংলা ১৩০৭ বঙ্গাব্দে এটি ঘটে। যা বাংলাদেশর কমলগঞ্জ থানার ভানুবিল মৌজার মণিপুরী প্রজাদের ব্রিটিশ এবং তাদের জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস।

তথ্যসূত্র

  • মৌলভীবাজার জেলার জনজীবন/ অধ্যক্ষ রসময় মোহান্ত, ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ৮৭
  • আরণ্য জনপদে/ আবদুস সাত্তার, পৃষ্ঠা ২৯৭
  • মণিপুরী জাতিসত্তা বিতর্ক: একটি নিরপেক্ষ পাঠ / অসীম কুমার সিংহ, ২০০
  • রিপোর্ট: জাতীয় আদিবাসী গোলটেবিল বৈঠক / ডিসেম্বর ১৮-২০,১৯৯৭ ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩২
  • পুর্ব্ববঙ্গ ও আসাম/ শ্রী কৃষ্ণমোহন ধর, ১৯০৯ , পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭
  • নানকার বিদ্রোহ / অজয় ভট্টাচার্য ,১৯৭৭
  • উত্তর ভানুবিল কৃষক প্রজা আন্দোলন বারোহ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজ / অধ্যাপক রণজিত সিংহ, ১৯৮৫
  • মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত / হাজী মো.আব্দুস সামাদ ২০১৭, পৃষ্ঠা ১২২-১২৫