বিষয়বস্তুতে চলুন

হুমায়ুন আজাদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
[পরীক্ষিত সংশোধন][পরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Moheen (আলোচনা | অবদান)
KanikBot (আলোচনা | অবদান)
 
(২৪ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৪৭টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{ভালো নিবন্ধ}}
{{ভালো নিবন্ধ}}
{{তথ্যছক লেখক
{{তথ্যছক লেখক
| নাম = হুমায়ুন আজাদ
| নাম = হুমায়ুন আজাদ
| চিত্র = হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪).jpg
| চিত্র = হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪).jpg
| চিত্রের_আকার =
| চিত্রের_আকার =
| alt = হুমায়ুন আজাদের আলোকচিত্র
| alt = হুমায়ুন আজাদের আলোকচিত্র
| শিরোলিপি = অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ
| শিরোলিপি = অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ
| জন্ম_নাম = হুমায়ুন কবীর
| জন্ম_নাম = হুমায়ুন কবীর
| জন্ম_তারিখ = {{জন্ম তারিখ|১৯৪৭|৪|২৮}}
| জন্ম_তারিখ = {{জন্ম তারিখ|১৯৪৭|৪|২৮}}
| জন্ম_স্থান = কামারগাঁ, [[শ্রীনগর উপজেলা|শ্রীনগর]], [[বিক্রমপুর]] (বর্তমানে [[মুন্সিগঞ্জ জেলা|মুন্সিগঞ্জ]]), [[ব্রিটিশ ভারত]]<!--দেখুন: [[বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭)]]--> (বর্তমানে [[বাংলাদেশ]])
| জন্ম_স্থান = কামারগাঁ, [[শ্রীনগর উপজেলা|শ্রীনগর]], [[বিক্রমপুর]] (বর্তমানে [[মুন্সীগঞ্জ জেলা|মুন্সীগঞ্জ]]), [[ব্রিটিশ ভারত]]<!--দেখুন: [[বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭)]]--> (বর্তমানে [[বাংলাদেশ]])
| মৃত্যু_তারিখ = {{মৃত্যু তারিখ ও বয়স|২০০৪|৮|১২|১৯৪৭|৪|২৮}}
| মৃত্যু_তারিখ = {{মৃত্যু তারিখ ও বয়স|২০০৪|৮|১২|১৯৪৭|৪|২৮}}
| মৃত্যু_স্থান = [[মিউনিখ]], [[জার্মানি]]
| মৃত্যু_স্থান = [[মিউনিখ]], [[জার্মানি]]
| সমাধিস্থল = [[রাঢ়িখাল]]
| সমাধিস্থল = [[রাঢ়িখাল]]
| জাতীয়তা = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| জাতীয়তা = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| [[ব্রিটিশ ভারত]] (এপ্রিল - আগস্ট ১৯৪৭)
| [[ব্রিটিশ ভারত]] (এপ্রিল - আগস্ট ১৯৪৭)
| [[পাকিস্তান]] (১৯৪৭ - ১৯৭১)
| [[পাকিস্তান]] (১৯৪৭ - ১৯৭১)
| [[বাংলাদেশ]] (১৯৭১ - ২০০৪)
| [[বাংলাদেশ]] (১৯৭১ - ২০০৪)
}}
}}
| শিক্ষা = স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর (বাংলা, [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]])<br/>[[পিএইচডি]] ([[ভাষাবিজ্ঞান]], [[এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়]])
| শিক্ষা = স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর (বাংলা, [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]])<br/>[[পিএইচডি]] ([[ভাষাবিজ্ঞান]], [[এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়]])
| শিক্ষা_প্রতিষ্ঠান = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| শিক্ষা_প্রতিষ্ঠান = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]
| [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]
| [[এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়]]
| [[এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়]]
}}
}}
| পেশা = {{মসৃণতালিকা |
| পেশা = {{মসৃণতালিকা |
*[[কবি]]
* [[কবি]]
*ঔপন্যাসিক
* ঔপন্যাসিক
*গল্পকার
* গল্পকার
*সমালোচক
* সমালোচক
*ভাষাবিজ্ঞানী
* ভাষাবিজ্ঞানী
*অধ্যাপক
* অধ্যাপক
*গবেষক
* গবেষক
}}
}}
| সক্রিয়_বছর = ১৯৭৩, ১৯৮০ - ২০০৪
| সক্রিয়_বছর = ১৯৭৩, ১৯৮০ - ২০০৪
| ধরনসমূহ = আধুনিক
| ধরনসমূহ = আধুনিক
| আন্দোলন = [[প্রথা|প্রথাবিরোধিতা]]
| আন্দোলন = [[প্রথা|প্রথাবিরোধিতা]]
| উল্লেখযোগ্য_রচনা = [[অলৌকিক ইস্টিমার]]<br/>[[সব কিছু ভেঙে পড়ে]]<br/>[[নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু]]<br/>[[একটি খুনের স্বপ্ন]]
| উল্লেখযোগ্য_রচনা = [[অলৌকিক ইস্টিমার]]<br/>[[সব কিছু ভেঙে পড়ে]]<br/>[[নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু]]<br/>[[একটি খুনের স্বপ্ন]]
| দাম্পত্যসঙ্গী = {{বিবাহ|লতিফা কোহিনূর|১৯৭৫|২০০৪|reason=মৃত্যুপূর্ব}}
| দাম্পত্যসঙ্গী = {{বিবাহ|লতিফা কোহিনূর|১৯৭৫|২০০৪|reason=মৃত্যুপূর্ব}}
| সন্তান = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| সন্তান = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| মৌলি আজাদ
| মৌলি আজাদ
| স্মিতা আজাদ
| স্মিতা আজাদ
| অনন্য আজাদ
| অনন্য আজাদ
}}
}}
| আত্মীয় = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| আত্মীয় = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| আবদুর রাশেদ (পিতা)
| আবদুর রাশেদ (পিতা)
| জোবেদা খাতুন (মাতা)
| জোবেদা খাতুন (মাতা)
}}
}}
| পুরস্কার = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| পুরস্কার = {{অ-বুলেটকৃত তালিকা
| {{Awards|[[একুশে পদক]]|২০১২|মরণোত্তর}}
| {{Awards|[[একুশে পদক]]|২০১২|মরণোত্তর}}
| {{Awards|[[বাংলা একাডেমি পুরস্কার]]|১৯৮৬}}
| {{Awards|[[বাংলা একাডেমি পুরস্কার]]|১৯৮৬}}
}}
}}
| স্বাক্ষর = হুমায়ুন আজাদের স্বাক্ষর.svg
| স্বাক্ষর = হুমায়ুন আজাদের স্বাক্ষর.svg
| স্বাক্ষরের_বিকল্প = হুমায়ুন আজাদের স্বাক্ষর
| স্বাক্ষরের_বিকল্প = হুমায়ুন আজাদের স্বাক্ষর
}}
}}
'''হুমায়ুন আজাদ''' (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১২ আগস্ট ২০০৪ [[খ্রিস্টাব্দ]];{{r|বাংলাপিডিয়া}} ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২৬ শ্রাবণ ১৪১১ [[বঙ্গাব্দ]]) একজন [[বাংলাদেশি]] কবি, ঔপন্যাসিক, [[ভাষাবিজ্ঞানী]], সমালোচক, রাজনীতিক ভাষ্যকার, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক, এবং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি [[ধর্ম]], [[মৌলবাদ]], প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, [[যৌনতা]], [[নারীবাদ]] ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদের ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও অধিক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে তার [[নারীবাদ|নারীবাদী]] গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ ''[[নারী (গ্রন্থ)|নারী]]'' প্রকাশের পর বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর ধরে বইটি [[বাংলাদেশ সরকার]] কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল। এটি তার বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসাবেও স্বীকৃত। এছাড়াও তার ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' উপন্যাসটি পাঠকমহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তার রচিত প্রবচন সংকলন ১৯৯২ সালে ''[[হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ]]'' নামে প্রকাশিত হয়। তাকে ১৯৮৬ সালে [[বাংলা একাডেমি পুরস্কার]] এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং [[ভাষাবিজ্ঞান|ভাষাবিজ্ঞানে]] বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর [[একুশে পদক]] প্রদান করা হয়। ২০০৩ সালে তার রচিত কিশোরসাহিত্য ''ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা'' (১৯৮৫) এবং ''[[আব্বুকে মনে পড়ে]]'' (১৯৯২) [[জাপানি ভাষা|জাপানি ভাষায়]] অনূদিত হয়েছিলো।
'''হুমায়ুন আজাদ''' (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১২ আগস্ট ২০০৪ [[খ্রিস্টাব্দ]];{{r|বাংলাপিডিয়া}} ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২৬ শ্রাবণ ১৪১১ [[বঙ্গাব্দ]]) একজন [[বাংলাদেশি]] কবি, ঔপন্যাসিক, [[ভাষাবিজ্ঞানী]], সমালোচক, রাজনীতিক ভাষ্যকার, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক, এবং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি [[ধর্ম]], [[মৌলবাদ]], প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, [[যৌনতা]], [[নারীবাদ]] ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদের ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও অধিক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে তার [[নারীবাদ|নারীবাদী]] গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ ''[[নারী (গ্রন্থ)|নারী]]'' প্রকাশের পর বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর ধরে বইটি [[বাংলাদেশ সরকার]] কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল। এটি তার বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসাবেও স্বীকৃত। এছাড়াও তার ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' উপন্যাসটি পাঠকমহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তার রচিত প্রবচন সংকলন ১৯৯২ সালে ''[[হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ]]'' নামে প্রকাশিত হয়। তাকে ১৯৮৬ সালে [[বাংলা একাডেমি পুরস্কার]] এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং [[ভাষাবিজ্ঞান|ভাষাবিজ্ঞানে]] বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর [[একুশে পদক]] প্রদান করা হয়। ২০০৩ সালে তার রচিত কিশোরসাহিত্য ''[[ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না]]'' (১৯৮৫) এবং ''[[আব্বুকে মনে পড়ে]]'' (১৯৯২) [[জাপানি ভাষা|জাপানি ভাষায়]] অনূদিত হয়েছিলো।


হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত ধ্যানধারা সচেতনভাবে পরিহার করতেন। তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য পল্লীপ্রেম, নর-নারীরপ্রেম, প্রগতিবাদিতা ও [[ধর্মনিরপেক্ষতা]], [[সামরিক শাসন]] ও [[একনায়কতন্ত্র|একনায়কতন্ত্রের]] বিরোধিতা এবং নারীবাদের জন্য পরিচিত। তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অভীষ্ট তার সাহিত্যকে প্রভাবান্বিত করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' উপন্যাসে মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে [[#হত্যা প্রচেষ্টা|২০০৪ সালে তিনি হামলার শিকার হন]]।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article467139.bdnews|শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় সাঈদী গ্রেপ্তার|ওয়েবসাইট=bangla.bdnews24.com|সংগ্রহের-তারিখ=2020-12-12}}</ref>
হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত ধ্যানধারা সচেতনভাবে পরিহার করতেন। তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য পল্লীপ্রেম, নর-নারীরপ্রেম, প্রগতিবাদিতা ও [[ধর্মনিরপেক্ষতা]], [[সামরিক শাসন]] ও [[একনায়কতন্ত্র|একনায়কতন্ত্রের]] বিরোধিতা এবং নারীবাদের জন্য পরিচিত। তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অভীষ্ট তার সাহিত্যকে প্রভাবান্বিত করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' উপন্যাসে মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে [[#হত্যা প্রচেষ্টা|২০০৪ সালে তিনি হামলার শিকার হন]]।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article467139.bdnews|শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় সাঈদী গ্রেপ্তার|ওয়েবসাইট=bangla.bdnews24.com|সংগ্রহের-তারিখ=2020-12-12|আর্কাইভের-তারিখ=২০২১-০১-২৮|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20210128033537/https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article467139.bdnews|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref>


==জীবন==
== জীবন ==
===প্রাথমিক জীবন===
=== প্রাথমিক জীবন ===
হুমায়ুন আজাদ ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে তার মাতামহের বাড়ি, তৎকালীন [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]]<!--দেখুন: [[বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭)]]--> (বর্তমানে [[বাংলাদেশ]]) অধীন [[বিক্রমপুর|বিক্রমপুরের]] কামারগাঁয় জন্ম নেন; যেটি বর্তমানে [[মুন্সিগঞ্জ জেলা|মুন্সিগঞ্জ জেলার]] [[শ্রীনগর উপজেলা|শ্রীনগর উপজেলার]] অন্তর্গত।<ref name="জন্মস্থান">{{harvnb|আজাদ|২০১১|p=১১}}: আজাদের জন্ম দক্ষিণ রাঢ়িখাল গ্রামে নয় (অনেকেই তাই-ই ভাবেন), তার নানান বাড়ি কামারগাঁয়ে।; {{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৮}}: আমি জন্মেছিলাম আমার নানাবাড়িতে&ndash; তখন নানাবাড়িতে জন্ম নেয়াই রীতি ছিলো&ndash;, আমাদের গ্রাম থেকে পশ্চিমে একটি গাছপালাছায়াঢাকা গ্রামে, কামারগাঁয়ে।</ref> তার জন্ম নাম ছিল হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর নাম পরিবর্তনের মাধ্যম তিনি বর্তমান নাম ধারণ করেন।<ref name="বাংলাপিডিয়া">{{বাংলাপিডিয়া উদ্ধৃতি |অধ্যায়=আজাদ,_হুমায়ুন |লেখক=মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম}}</ref> তার বাবা আবদুর রাশেদ প্রথম জীবনে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা{{r|বাংলাপিডিয়া}} ও পোস্টমাস্টার পদে চাকরি করতেন,{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৩৬}} পরে ব্যবসায়ী হন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=১০}} মা জোবেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী,{{r|বাংলাপিডিয়া}} যিনি ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.dibalok.com/news/details/Literature/3994|শিরোনাম=প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ'র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী|তারিখ=11 August 2017|সংগ্রহের-তারিখ=31 December 2019|ওয়েবসাইট=দিবালোক}}</ref> তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে আজাদ ছিলেন পিতামাতার দ্বিতীয় পুত্রসন্তান।{{refn|group=বিদ্র|আমার বাবার নাম আবদুর রাশেদ, মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। আমি তাদের দ্বিতীয় পুত্র, ও তৃতীয় সন্তান। তাদের প্রথম পুত্রটি জন্মের পরেই ম'রে গিয়েছিলো, আমি তাই প্রথম পুত্ররূপে গণ্য হয়েছি..।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৯}}}} ছেলেবেলায় তার ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি রাড়িখাল গ্রামে বেড়ে ওঠেন।<ref>{{harvnb|আজাদ|২০১১|p=১২}}: ..সেই বাল্যকাল তথা রাড়িখালের মাত্র ১৫ বছর জীবনযাপন ছিল তার জীবনের সবচেয়ে সুখকর অধ্যায়।; {{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৯}}: ১৫ বছর পর্যন্ত আমি বড় হয়েছি আমাদের গ্রামে রাড়িখালে।</ref> পরবর্তীতে তার বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন ভাবে [[রাড়িখাল]] গ্রামের বর্ণনা উঠে এসেছে এবং এ গ্রাম নিয়ে তিনি "রাড়িখাল : ঘুমের ভেতরে নিবিড় শ্রাবণধারা" নামে একটি লেখা প্রকাশ করেন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৯}} আজাদের মতে তার শৈশব ও কৈশোর ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ খণ্ড, যে সময়ের কথা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার ''[[ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না]]'' (১৯৮৫), ''[[নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু]]'' (২০০০), ''[[শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা]]'' (২০০২) এবং বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে।<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=১১}}: আমার বাল্যকাল আমার লেখায় নানাভাবে এসেছ,&ndash; ''ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না'', ''নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু'', ''শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা'' এবং আরো নানা বইতে আমি আমার বাল্যকালকে ধরে রাখতে চেয়েছি। (প্রাথমিক উৎস)</ref> আজাদের গ্রামের মাইল দুয়েক দক্ষিণে রয়েছে [[পদ্মা নদী]], রাতের বেলায় নদীতে স্টিমার চলার ধ্বনি শৈশবে তাকে প্রভাবিত করায় তিনি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম দেন ''[[অলৌকিক ইস্টিমার]]'' (১৯৭৩)।<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=১২}}: আমাদের গ্রামের মাইল দুয়েক দক্ষিণ দিয়ে বয়ে যায় পদ্মা, তখন বিশাল ছিলো; এপার থেকে ওপার ১২ মাইল শুনেছি। ওই পদ্মানদী দিয়ে রাতের বেলা ইস্টিমার যেতো, ভাগ্যকূলে ভিড়তো; কতো রাতে ঘুম ভেঙে গেছে আমার ইস্টিমারের সিঁটিতে। ঘুম ভেঙে মনে হতো কোন সুদূর থেকে ভেসে আসে এই ধ্বনি, আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকতাম। আমার প্রথম কবিতার বইয়ের নাম রেখেছিলাম ''অলৌকিক ইস্টিমার'', কেননা আজো আমি পদ্মায় মধ্যরাতের জাহাজের সিঁটি শুনি।</ref>
হুমায়ুন আজাদ ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে তার মাতামহের বাড়ি, তৎকালীন [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]]<!--দেখুন: [[বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭)]]--> (বর্তমানে [[বাংলাদেশ]]) অধীন [[বিক্রমপুর|বিক্রমপুরের]] কামারগাঁয় জন্ম নেন; যেটি বর্তমানে [[মুন্সীগঞ্জ জেলা|মুন্সীগঞ্জ জেলার]] [[শ্রীনগর উপজেলা|শ্রীনগর উপজেলার]] অন্তর্গত।<ref name="জন্মস্থান">{{harvnb|আজাদ|২০১১|p=১১}}: আজাদের জন্ম দক্ষিণ রাঢ়িখাল গ্রামে নয় (অনেকেই তাই-ই ভাবেন), তার নানান বাড়ি কামারগাঁয়ে।; {{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৮}}: আমি জন্মেছিলাম আমার নানাবাড়িতে&ndash; তখন নানাবাড়িতে জন্ম নেয়াই রীতি ছিলো&ndash;, আমাদের গ্রাম থেকে পশ্চিমে একটি গাছপালাছায়াঢাকা গ্রামে, কামারগাঁয়ে।</ref> তার জন্ম নাম ছিল হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর নাম পরিবর্তনের মাধ্যম তিনি বর্তমান নাম ধারণ করেন।<ref name="বাংলাপিডিয়া">{{বাংলাপিডিয়া উদ্ধৃতি |অধ্যায়=আজাদ,_হুমায়ুন |লেখক=মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম}}</ref> তার বাবা আবদুর রাশেদ প্রথম জীবনে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা{{r|বাংলাপিডিয়া}} ও পোস্টমাস্টার পদে চাকরি করতেন,{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৩৬}} পরে ব্যবসায়ী হন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=১০}} মা জোবেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী,{{r|বাংলাপিডিয়া}} যিনি ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.dibalok.com/news/details/Literature/3994|শিরোনাম=প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ'র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি|তারিখ=11 August 2017|সংগ্রহের-তারিখ=31 December 2019|ওয়েবসাইট=দিবালোক}}</ref> তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে আজাদ ছিলেন পিতামাতার দ্বিতীয় পুত্রসন্তান।{{refn|group=বিদ্র|আমার বাবার নাম আবদুর রাশেদ, মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। আমি তাদের দ্বিতীয় পুত্র, ও তৃতীয় সন্তান। তাদের প্রথম পুত্রটি জন্মের পরেই ম'রে গিয়েছিলো, আমি তাই প্রথম পুত্ররূপে গণ্য হয়েছি..।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৯}}}} ছেলেবেলায় তার ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি রাড়িখাল গ্রামে বেড়ে ওঠেন।<ref>{{harvnb|আজাদ|২০১১|p=১২}}: ..সেই বাল্যকাল তথা রাড়িখালের মাত্র ১৫ বছর জীবনযাপন ছিল তার জীবনের সবচেয়ে সুখকর অধ্যায়।; {{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৯}}: ১৫ বছর পর্যন্ত আমি বড় হয়েছি আমাদের গ্রামে রাড়িখালে।</ref> পরবর্তীতে তার বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন ভাবে [[রাড়িখাল]] গ্রামের বর্ণনা উঠে এসেছে এবং এ গ্রাম নিয়ে তিনি "রাড়িখাল : ঘুমের ভেতরে নিবিড় শ্রাবণধারা" নামে একটি লেখা প্রকাশ করেন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৯}} আজাদের মতে তার শৈশব ও কৈশোর ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ খণ্ড, যে সময়ের কথা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার ''[[ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না]]'' (১৯৮৫), ''[[নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু]]'' (২০০০), ''[[শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা]]'' (২০০২) এবং বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে।<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=১১}}: আমার বাল্যকাল আমার লেখায় নানাভাবে এসেছ,&ndash; ''ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না'', ''নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু'', ''শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা'' এবং আরো নানা বইতে আমি আমার বাল্যকালকে ধরে রাখতে চেয়েছি। (প্রাথমিক উৎস)</ref> আজাদের গ্রামের মাইল দুয়েক দক্ষিণে রয়েছে [[পদ্মা নদী]], রাতের বেলায় নদীতে স্টিমার চলার ধ্বনি শৈশবে তাকে প্রভাবিত করায় তিনি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম দেন ''[[অলৌকিক ইস্টিমার]]'' (১৯৭৩)।<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=১২}}: আমাদের গ্রামের মাইল দুয়েক দক্ষিণ দিয়ে বয়ে যায় পদ্মা, তখন বিশাল ছিলো; এপার থেকে ওপার ১২ মাইল শুনেছি। ওই পদ্মানদী দিয়ে রাতের বেলা ইস্টিমার যেতো, ভাগ্যকূলে ভিড়তো; কতো রাতে ঘুম ভেঙে গেছে আমার ইস্টিমারের সিঁটিতে। ঘুম ভেঙে মনে হতো কোন সুদূর থেকে ভেসে আসে এই ধ্বনি, আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকতাম। আমার প্রথম কবিতার বইয়ের নাম রেখেছিলাম ''অলৌকিক ইস্টিমার'', কেননা আজো আমি পদ্মায় মধ্যরাতের জাহাজের সিঁটি শুনি।</ref>


১৯৫২ সালে আজাদ দক্ষিণ রাড়িখাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইনফ্যান্ট (প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা) শ্রেণীতে ভর্তি হন,<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=১২-১৩}}: আমি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই সবচেয়ে নিচের ক্লাশে, তার নাম ছিলো 'ইনফ্যান্ট ক্লাশ'..।</ref> সেখানে তিনি ইনফ্যান্ট থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত মোট চার বছর অধ্যয়ন করেন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=১৬}} চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার জন্য তিনি স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=১৬-১৭}} ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। এ বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন ([[মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট|মাধ্যমিক]]) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=২৩}}
১৯৫২ সালে আজাদ দক্ষিণ রাড়িখাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইনফ্যান্ট (প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা) শ্রেণীতে ভর্তি হন,<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=১২-১৩}}: আমি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই সবচেয়ে নিচের ক্লাশে, তার নাম ছিলো 'ইনফ্যান্ট ক্লাশ'..।</ref> সেখানে তিনি ইনফ্যান্ট থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত মোট চার বছর অধ্যয়ন করেন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=১৬}} চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার জন্য তিনি স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=১৬-১৭}} ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। এ বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন ([[মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট|মাধ্যমিক]]) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=২৩}}


=== উচ্চশিক্ষা ===
=== উচ্চশিক্ষা ===
[[File:Humayun Azad with fellow graduate-mates.jpg|থাম্ব|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হুমায়ুন আজাদ (মাঝে)]]
[[চিত্র:Humayun Azad on his convocation day - 1970.jpg|থাম্ব|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হুমায়ুন আজাদ (মাঝে)]]
১৯৬২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য আজাদ [[ঢাকা|ঢাকায়]] চলে আসেন। মানবিক বিভাগে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবার ইচ্ছায় ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজে]] বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন।<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=৪০}}: প্রবেশিকা পাঠ করার পর আমি ঠিক করেছিলাম এইসএসসিতে মানবিক পড়বো।.. আমি ঢাকা কলেজে বিজ্ঞানে এইসএসসি শ্রেণিতে ভর্তি হই; ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে। (প্রাথমিক উৎস)</ref> ১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে [[উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট|উচ্চ মাধ্যমিক]] পাশ করেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}} এরপর একই বছর তিনি [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] কলা অনুষদে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে [[বাংলা সাহিত্য|বাংলা সাহিত্যে]] [[স্নাতক]] ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}} উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৪২}}<!-- [সূত্র??] ২০১৬ সালে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বন্ধু স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, আজাদ লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী ছিলেন এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে বই পড়ে অনেক সময় ব্যয় করতেন।--> হুমায়ুন আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালীন [[সলিমুল্লাহ মুসলিম হল]] ছাত্রাবাসে থাকতেন।
১৯৬২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য আজাদ [[ঢাকা|ঢাকায়]] চলে আসেন। মানবিক বিভাগে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবার ইচ্ছায় ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজে]] বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন।<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=৪০}}: প্রবেশিকা পাঠ করার পর আমি ঠিক করেছিলাম এইসএসসিতে মানবিক পড়বো।.. আমি ঢাকা কলেজে বিজ্ঞানে এইসএসসি শ্রেণিতে ভর্তি হই; ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে। (প্রাথমিক উৎস)</ref> ১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে [[উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট|উচ্চ মাধ্যমিক]] পাশ করেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}} এরপর একই বছর তিনি [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] কলা অনুষদে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে [[বাংলা সাহিত্য|বাংলা সাহিত্যে]] [[স্নাতক]] ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}} উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৪২}}<!-- [সূত্র??] ২০১৬ সালে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বন্ধু স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, আজাদ লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী ছিলেন এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে বই পড়ে অনেক সময় ব্যয় করতেন।--> হুমায়ুন আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালীন [[সলিমুল্লাহ মুসলিম হল]] ছাত্রাবাসে থাকতেন।


=== কর্মজীবন ===
=== কর্মজীবন ===
{{তথ্যছক পদস্থ কর্মকর্তা
{{তথ্যছক পদস্থ কর্মকর্তা
|office1 =[[চট্টগ্রাম কলেজ]]
| office1 = [[চট্টগ্রাম কলেজ]]
|title1 =প্রভাষক
| title1 = প্রভাষক
|term_start1 =১৯৬৯
| term_start1 = ১৯৬৯
|term_end1 =১৯৬৯
| term_end1 = ১৯৬৯
|office2 =[[চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]]
| office2 = [[চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]]
|title2 =প্রভাষক
| title2 = প্রভাষক
|term_start2 =১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০
| term_start2 = ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০
|term_end2 =১৯৭০
| term_end2 = ১৯৭০
|office3 =[[জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]]
| office3 = [[জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]]
|title3 =প্রভাষক
| title3 = প্রভাষক
|term_start3 =১২ ডিসেম্বর ১৯৭০
| term_start3 = ১২ ডিসেম্বর ১৯৭০
|term_end3 =১৯৭৬
| term_end3 = ১৯৭৬
|office4 =[[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]
| office4 = [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]
|title4 =প্রভাষক
| title4 = প্রভাষক
|term_start4 =১ নভেম্বর ১৯৭৮ সালের
| term_start4 = ১ নভেম্বর ১৯৭৮
|term_end4 =১৯৮৬
| term_end4 = ১৯৮৬
|title5 =অধ্যাপক
| title5 = অধ্যাপক
|term_start5 =১৯৮৬
| term_start5 = ১৯৮৬
|term_end5 =২০০৪
| term_end5 = ২০০৪
}}
}}
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ২২ বছর বয়সে তার কর্মজীবন শুরু হয় [[চট্টগ্রাম কলেজ|চট্টগ্রাম কলেজে]] প্রভাষক হিসাবে।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৪৪}} সেখানে কিছুকাল কর্মরত থাকার পর ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি [[চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়|চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের]] বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৪৫}} একই বছর ১২ ডিসেম্বর তিনি [[জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়|জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে]] বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৪৮}} ১৯৭৩ সালে তার প্রথম গবেষণা গ্রন্থ ''[[রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা]]''{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৬৩}} এবং একইবছর সেপ্টেম্বরে কাব্যগ্রন্থ ''[[অলৌকিক ইস্টিমার]]'' প্রকাশিত হয়। সে বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ভাষাবিজ্ঞান পড়তে [[স্কটল্যান্ড|স্কটল্যান্ডে]] চলে যান।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৫০}} ১৯৭৬ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের [[এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে [[ভাষাবিজ্ঞান|ভাষাবিজ্ঞানে]] [[পিএইচডি]] ডিগ্রি লাভ করেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}} তার গবেষণার বিষয় ছিল ''বাংলা ভাষায় সর্বনামীয়করণ''। এই গবেষণাপত্র ১৯৮৩ সালে ''[[প্রোনোমিনালাইজেশন ইন বেঙলি]]'' নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের [[দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড]] থেকে প্রকাশিত হয়। এডিনবরায় গবেষণাকালীন সময়ে তিনি রবার্ট ক্যাল্ডরের সহযোগিতায় [[জীবনানন্দ দাশ|কবি জীবনানন্দ দাশ]] এবং নিজের কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলেন, যেগুলি "লিডস বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল" এবং এডিনবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের "[[Chapman (magazine)|চ্যাপম্যান]]" সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৬৩}}
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ২২ বছর বয়সে তার কর্মজীবন শুরু হয় [[চট্টগ্রাম কলেজ|চট্টগ্রাম কলেজে]] প্রভাষক হিসাবে।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৪৪}} সেখানে কিছুকাল কর্মরত থাকার পর ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি [[চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়|চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের]] বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৪৫}} একই বছর ১২ ডিসেম্বর তিনি [[জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়|জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে]] বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৪৮}} ১৯৭৩ সালে তার প্রথম গবেষণা গ্রন্থ ''[[রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা]]''{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৬৩}} এবং একইবছর সেপ্টেম্বরে কাব্যগ্রন্থ ''[[অলৌকিক ইস্টিমার]]'' প্রকাশিত হয়। সে বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ভাষাবিজ্ঞান পড়তে [[স্কটল্যান্ড|স্কটল্যান্ডে]] চলে যান।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৫০}} ১৯৭৬ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের [[এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে [[ভাষাবিজ্ঞান|ভাষাবিজ্ঞানে]] [[পিএইচডি]] ডিগ্রি লাভ করেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}} তার গবেষণার বিষয় ছিল ''বাংলা ভাষায় সর্বনামীয়করণ''। এই গবেষণাপত্র ১৯৮৩ সালে ''[[প্রোনোমিনালাইজেশন ইন বেঙ্গলি]]'' নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের [[দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড]] থেকে প্রকাশিত হয়। এডিনবরায় গবেষণাকালীন সময়ে তিনি রবার্ট ক্যাল্ডরের সহযোগিতায় [[জীবনানন্দ দাশ|কবি জীবনানন্দ দাশ]] এবং নিজের কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলেন, যেগুলি "লিডস বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল" এবং এডিনবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের "[[চ্যাপম্যান]]" সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৬৩}}


১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর আজাদ [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৫০}} এবং পরবর্তীকালে বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।{{r|বাংলাপিডিয়া}}
১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর আজাদ [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৫০}} এবং পরবর্তীকালে বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।{{r|বাংলাপিডিয়া}}


==সাহিত্যকর্ম==
== সাহিত্যকর্ম ==
{{মূল|হুমায়ুন আজাদের গ্রন্থতালিকা}}
{{মূল|হুমায়ুন আজাদের গ্রন্থতালিকা}}


হুমায়ুন আজাদের কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার শুরু হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর তবে বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৬৩}} তার "ঘড়ি বলে টিক টিক" শিরোনামে প্রথম লেখা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল [[দৈনিক ইত্তেফাক|দৈনিক ইত্তেফাকের]] শিশুপাতা ''কচিকাঁচার আসরে''। শৈশবে পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকায় একাধিক প্রবন্ধ লিখেছিলেন।<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=৩৬}}: কচিকাচার আসরে আমি কবিতা পাঠাই, সেগুলি ছাপা না হওয়াতে আমি ঘড়ি সম্পর্কে "ঘড়ি বলে টিক টিক" নামে একটি প্রবন্ধ পাঠাই। দেখি সেটা ছাপা হয়েছে, অনেক কিছু সংশোধন ক'রে। পরে আমার অনেক প্রবন্ধ&ndash; একটির নাম মনে পড়ছে&ndash; "ভাওয়ালের কবি গোবিন্দ দাস"&ndash; ছাপা হয় কচিকাচার আসরে। (প্রাথমিক উৎস)</ref> তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৭। তার প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমূহ জীবদ্দশায় ''[[হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা]]'' (১৯৯৩) ও ''[[কাব্যসংগ্রহ]]'' (১৯৯৮) এবং মৃত্যুর পরে ''[[কাব্যসমগ্র]]'' (২০০৫) বইয়ে প্রকাাশিত হয়। তিনি ১২টি উপন্যাস লিখেছেন। তার উপন্যাসসমূহ ''[[উপন্যাসসমগ্র ১]]'' (২০০১)<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.rokomari.com/book/2692/uponash-somoggro-1|শিরোনাম=উপন্যাসসমগ্র-১, হুমায়ুন আজাদ|ওয়েবসাইট=rokomari.com}}</ref>, ''[[উপন্যাসসমগ্র ২]]'' (২০০২) এবং ''[[উপন্যাসসমগ্র ৩]]'' (২০০৩) বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ''[[যাদুকরের মৃত্যু]]'' (১৯৯৬) নামে ১টি মৌলিক ছোটগল্পের বই লিখেছেন। এছাড়াও তার ৮টি কিশোরসাহিত্য, এবং ৮টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক বই রয়েছে।
হুমায়ুন আজাদের কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার শুরু হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর তবে বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন{{sfn|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|p=৬৩}} তার "ঘড়ি বলে টিক টিক" শিরোনামে প্রথম লেখা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল [[দৈনিক ইত্তেফাক|দৈনিক ইত্তেফাকের]] শিশুপাতা ''কচিকাঁচার আসরে''। শৈশবে পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকায় একাধিক প্রবন্ধ লিখেছিলেন।<ref>{{harvnb|উদ্দিন|বুলবুল|২০০৪|pp=৩৬}}: কচিকাচার আসরে আমি কবিতা পাঠাই, সেগুলি ছাপা না হওয়াতে আমি ঘড়ি সম্পর্কে "ঘড়ি বলে টিক টিক" নামে একটি প্রবন্ধ পাঠাই। দেখি সেটা ছাপা হয়েছে, অনেক কিছু সংশোধন ক'রে। পরে আমার অনেক প্রবন্ধ&ndash; একটির নাম মনে পড়ছে&ndash; "ভাওয়ালের কবি গোবিন্দ দাস"&ndash; ছাপা হয় কচিকাচার আসরে। (প্রাথমিক উৎস)</ref> তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৭। তার প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমূহ জীবদ্দশায় ''[[হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা]]'' (১৯৯৩) ও ''[[কাব্যসংগ্রহ]]'' (১৯৯৮) এবং মৃত্যুর পরে ''[[কাব্যসমগ্র]]'' (২০০৫) বইয়ে প্রকাাশিত হয়। তিনি ১২টি উপন্যাস লিখেছেন। তার উপন্যাসসমূহ ''[[উপন্যাসসমগ্র ১]]'' (২০০১)<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.rokomari.com/book/2692/uponash-somoggro-1|শিরোনাম=উপন্যাসসমগ্র-১, হুমায়ুন আজাদ|ওয়েবসাইট=rokomari.com}}</ref>, ''[[উপন্যাসসমগ্র ২]]'' (২০০২) এবং ''[[উপন্যাসসমগ্র ৩]]'' (২০০৩) বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ''[[যাদুকরের মৃত্যু]]'' (১৯৯৬) নামে ১টি মৌলিক ছোটগল্পের বই লিখেছেন। এছাড়াও তার ৮টি কিশোরসাহিত্য, এবং ৮টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক বই রয়েছে।


===কবিতা===
=== কবিতা ===
[[চিত্র:অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩).jpg|থাম্ব|প্রথম কাব্যগ্রন্থ ''[[অলৌকিক ইস্টিমার]]'' (১৯৭৩)]]
[[চিত্র:অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩).jpg|থাম্ব|প্রথম কাব্যগ্রন্থ ''[[অলৌকিক ইস্টিমার]]'' (১৯৭৩)]]


১০৩ নং লাইন: ১০৩ নং লাইন:


=== গল্প ===
=== গল্প ===
হুমায়ুন আজাদ সর্বপ্রথম একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন [[এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়]]ের পড়া শেষ করে স্কটল্যান্ড থেকে এসে, গল্পটির নাম তিনি দিয়েছিলেন '''অনবরত তুষারপাত'''। এই গল্পটি তিনি পরে [[দৈনিক ইত্তেফাক]] পত্রিকাতে ১৯৭৯ সালে প্রকাশ করেছিলেন। এই গল্পটি সহ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত লেখা আরও পাঁচটি গল্প তিনি '''[[যাদুকরের মৃত্যু]]''' (১৯৯৬) বইতে সংকলিত করেছিলেন। এরপর তিনি শিশুকিশোরদের জন্য আরো তিনটি গল্প লিখেন যেগুলো তিনি কিছু শিশুতোষ কবিতা সহ '''বুকপকেটে জোনাকি পোকা''' (১৯৯৩) গ্রন্থে সংকলন করেন। তিনি বইয়ের শুরুর দিকে বলেছিলেন,<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=আজাদ |প্রথমাংশ=হুমায়ুন |শিরোনাম=বুকপকেটে জোনাকি পোকা |প্রকাশক=[[আগামী প্রকাশনী]] |তারিখ=ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ |পাতা=৫}}</ref>
হুমায়ুন আজাদ সর্বপ্রথম একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন [[এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়]]ের পড়া শেষ করে স্কটল্যান্ড থেকে এসে, গল্পটির নাম তিনি দিয়েছিলেন '''অনবরত তুষারপাত'''। এই গল্পটি তিনি পরে [[দৈনিক ইত্তেফাক]] পত্রিকাতে ১৯৭৯ সালে প্রকাশ করেছিলেন। এই গল্পটি সহ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত লেখা আরও পাঁচটি গল্প তিনি '''[[যাদুকরের মৃত্যু]]''' (১৯৯৬) বইতে সংকলিত করেছিলেন। এরপর তিনি শিশুকিশোরদের জন্য আরো তিনটি গল্প লিখেন যেগুলো তিনি কিছু শিশুতোষ কবিতা সহ '''[[বুকপকেটে জোনাকি পোকা]]''' (১৯৯৩) গ্রন্থে সংকলন করেন। তিনি বইয়ের শুরুর দিকে বলেছিলেন,<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=আজাদ |প্রথমাংশ=হুমায়ুন |শিরোনাম=বুকপকেটে জোনাকি পোকা |প্রকাশক=[[আগামী প্রকাশনী]] |তারিখ=ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ |পাতা=৫}}</ref>


{{উক্তি|কিশোরকিশোরীদের জন্য আমি তিন দশকে লিখেছি কিছু প্রবন্ধ, কয়েকটি কবিতা, তিনটি গল্প। প্রবন্ধগুলো একটু অন্য ধরনের; শব্দ, ভাষা, আর কবিতা সম্পর্কে; তাতে স্বপ্নের কথা আছে বেশি করে। কবিতাগুলোতেও তাই; গল্পগুলোতেও। এগুলোকে এক বইতেই রাখলাম, কেননা এটা স্বপ্নের বই। এগুলোকে গদ্যে লিখেছি বা ছন্দে লিখেছি, তবে এগুলো একই স্বপ্নে লেখা।|}}
{{উক্তি|কিশোরকিশোরীদের জন্য আমি তিন দশকে লিখেছি কিছু প্রবন্ধ, কয়েকটি কবিতা, তিনটি গল্প। প্রবন্ধগুলো একটু অন্য ধরনের; শব্দ, ভাষা, আর কবিতা সম্পর্কে; তাতে স্বপ্নের কথা আছে বেশি করে। কবিতাগুলোতেও তাই; গল্পগুলোতেও। এগুলোকে এক বইতেই রাখলাম, কেননা এটা স্বপ্নের বই। এগুলোকে গদ্যে লিখেছি বা ছন্দে লিখেছি, তবে এগুলো একই স্বপ্নে লেখা।|}}


===উপন্যাস===
=== উপন্যাস ===
[[চিত্র:একটি খুনের স্বপ্ন (২০০৪).jpg|thumb|left|হুমায়ুন আজাদের লেখা সর্বশেষ উপন্যাস ''[[একটি খুনের স্বপ্ন]]'' (২০০৪), যেটির প্রেক্ষাপট ছিলো ১৯৬০-এর দশক এবং উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]ের [[সলিমুল্লাহ মুসলিম হল]]ে থাকে যেখানে হুমায়ুন আজাদ ছাত্রাবস্থায় থেকেছিলেন।]]
[[চিত্র:ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল (১৯৯৪).jpg|thumb|left|হুমায়ুন আজাদের লেখা প্রথম উপন্যাস ''[[ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল]]'' (১৯৯৪), যেটির প্রেক্ষাপট ছিলো ১৯৮০-এর দশক এবং উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র রাশেদ [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]ের শিক্ষক যে বাংলাদেশের সমাজে চলা পরিবর্তন অবলোকন করে]]
মূলত কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক হলেও হুমায়ূন আজাদ ১৯৯০-এর দশকে ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৪ সালে মৃত্যু অবধি তার প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ছিলো ১২টি।
মূলত কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক হলেও হুমায়ূন আজাদ ১৯৯০-এর দশকে ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৪ সালে মৃত্যু অবধি তার প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ছিলো ১২টি।


১৯৯৪ সালে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন প্রথম উপন্যাস ''[[ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল]]''-এর মধ্যে দিয়ে।{{refn|group=বিদ্র|আমার একটি নতুন পরিচত এ-বছর থেকে শুরু হলো, এখন আমি নামের আগে ঔপন্যাসিক অভিধাটিও দেখি, দেখে আমার বেশ মজা লাগে, অনেকক্ষণ ধরে আমি বুঝতে পারিনা ঐ নামটি আমার কিনা? যখন নিশ্চিত হই নামটা আমারই তখন মজা লাগে।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ)|১৯৯৫|p=১১১}}}} [[বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান|বাংলাদেশের সামরিক শাসন]] প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটি তিনি উৎসর্গ করেছেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রাশেদকে, তার বাবার নামও ছিলো রাশেদ, তিনি উপন্যাসের উৎসর্গ পাতায় এভাবে লিখেছিলেন,
১৯৯৪ সালে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন প্রথম উপন্যাস ''[[ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল]]''-এর মধ্যে দিয়ে।{{refn|group=বিদ্র|আমার একটি নতুন পরিচত এ-বছর থেকে শুরু হলো, এখন আমি নামের আগে ঔপন্যাসিক অভিধাটিও দেখি, দেখে আমার বেশ মজা লাগে, অনেকক্ষণ ধরে আমি বুঝতে পারিনা ঐ নামটি আমার কিনা? যখন নিশ্চিত হই নামটা আমারই তখন মজা লাগে।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ)|১৯৯৫|p=১১১}}}} [[বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান|বাংলাদেশের সামরিক শাসন]] প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটি তিনি উৎসর্গ করেছেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রাশেদকে, তার বাবার নামও ছিলো রাশেদ, তিনি উপন্যাসের উৎসর্গ পাতায় এভাবে লিখেছিলেন,
{{উক্তি|উৎসর্গ পরলোকগত পিতা, আমি একটি নাম খুঁজছিলাম, আপনার নামটিই-রাশেদ-মনে পড়লো আমার।<ref name="ছাহাব">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ১=আজাদ |প্রথমাংশ১=হুমায়ুন |তারিখ=ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ |শিরোনাম=ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল |প্রকাশক=[[আগামী প্রকাশনী]] |পাতা=৫}}</ref>|}} ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় নারী-পুরুষের মধ্যেকার শারীরিক ও হৃদয়সম্পর্কের নানা আবর্তন এবং পরিণতির আখ্যানমূলক উপন্যাস ''[[সব কিছু ভেঙে পড়ে]]''।<ref name="জীবনবাদী">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |লেখক=ড. জাহারাবী রিপন |তারিখ=আগস্ট ১১, ২০০৮ |শিরোনাম=সব কিছু ভেঙে পড়ে : জীবনবাদী শিল্পদ্রষ্টা হুমায়ুন আজাদ |ইউআরএল=http://munshigonj24.com/2011/08/12/%E0%A6%B8%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%99%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%9C%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%80/ |প্রকাশক=মুন্সিগঞ্জ.কম |সংগ্রহের-তারিখ=নভেম্বর ৪, ২০১৭ }}</ref> ''সব কিছু ভেঙে পড়ে''র পর তিনি ''[[মানুষ হিসেবে আমার অপরাধসমূহ]]'' উপন্যাস লিখেছিলেন যেটি ছিলো একজন সরকারি কর্মকর্তার তার বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করা নিয়ে এবং তিনি এ-উপন্যাসটি বাংলাদেশের খ্যাতিমান আইনজীবী [[এম আমীর-উল ইসলাম|ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম]]কে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন।
{{উক্তি|উৎসর্গ পরলোকগত পিতা, আমি একটি নাম খুঁজছিলাম, আপনার নামটিই-রাশেদ-মনে পড়লো আমার।<ref name="ছাহাব">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ১=আজাদ |প্রথমাংশ১=হুমায়ুন |তারিখ=ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ |শিরোনাম=ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল |প্রকাশক=[[আগামী প্রকাশনী]] |পাতা=৫}}</ref>|}} ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় নারী-পুরুষের মধ্যেকার শারীরিক ও হৃদয়সম্পর্কের নানা আবর্তন এবং পরিণতির আখ্যানমূলক উপন্যাস ''[[সব কিছু ভেঙে পড়ে]]''।<ref name="জীবনবাদী">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |লেখক=ড. জাহারাবী রিপন |তারিখ=আগস্ট ১১, ২০০৮ |শিরোনাম=সব কিছু ভেঙে পড়ে : জীবনবাদী শিল্পদ্রষ্টা হুমায়ুন আজাদ |ইউআরএল=http://munshigonj24.com/2011/08/12/%E0%A6%B8%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%99%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%9C%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%80/ |প্রকাশক=মুন্সীগঞ্জ.কম |সংগ্রহের-তারিখ=নভেম্বর ৪, ২০১৭ }}</ref> ''সব কিছু ভেঙে পড়ে''র পর তিনি ''[[মানুষ হিসেবে আমার অপরাধসমূহ]]'' উপন্যাস লিখেছিলেন যেটি ছিলো একজন সরকারি কর্মকর্তার তার বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করা নিয়ে এবং তিনি এ-উপন্যাসটি বাংলাদেশের খ্যাতিমান আইনজীবী [[এম আমীর-উল ইসলাম|ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম]]কে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন।


১৯৯৯ সালে প্রকাশিত উপন্যাস [[কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ]]-এ হুমায়ুন আজাদ হাসান রশিদ নামের একজন কল্পিত বাঙালি কবির একজন বিবাহিত নারীর সাথে [[বিয়ে ছাড়া একত্রবাস|বিয়ে ছাড়া একত্রবাসের]] বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।
১৯৯৯ সালে প্রকাশিত উপন্যাস [[কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ]]-এ হুমায়ুন আজাদ হাসান রশিদ নামের একজন কল্পিত বাঙালি কবির একজন বিবাহিত নারীর সাথে [[বিয়ে ছাড়া একত্রবাস|বিয়ে ছাড়া একত্রবাসের]] বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।
১১৮ নং লাইন: ১১৮ নং লাইন:
২০০২ সালে প্রকাশিত ''[[১০,০০০, এবং আরো ১টি ধর্ষণ]]'' ছিলো বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের একটি ধর্ষিত মেয়ের জীবন নিয়ে যে তার ধর্ষণের ফসল বাচ্চাকে হত্যা করে।
২০০২ সালে প্রকাশিত ''[[১০,০০০, এবং আরো ১টি ধর্ষণ]]'' ছিলো বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের একটি ধর্ষিত মেয়ের জীবন নিয়ে যে তার ধর্ষণের ফসল বাচ্চাকে হত্যা করে।


২০০৪ সালে প্রকাশিত ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' ছিলো ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে এবং ''[[একটি খুনের স্বপ্ন]]'' উপন্যাস ছিলো একজন তরুণের অপর একটি তরুণীর জন্য ভালোবাসার কাহিনী নিয়ে। ''পাক সার জমিন সাদ বাদে'' তিনি মৌলবাদে দীক্ষিত এক পুরুষকে সবার শেষে প্রেমের কাছে পরাজিত করান। দেখান যে কণকলতা নামের তরুণীর জন্য উপন্যাসের প্রধান নায়ক অপরাধ-জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে আর ''একটি খুনের স্বপ্ন''তে তিনি নায়িকা সুফিয়ার জন্য নায়কের [[একতরফা প্রেম]]কেই করে তুলেছিলেন প্রধান উপজীব্য বিষয় যে নায়ক পরে নায়িকাকেই খুন করার চিন্তা করে। ''একটি খুনের স্বপ্ন'' উপন্যাসটি হুমায়ুন আজাদ তার নিজেরই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের (১৯৬৪-১৯৬৮) স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে লিখেছিলেন।
২০০৪ সালে প্রকাশিত ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' ছিলো ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে এবং ''[[একটি খুনের স্বপ্ন]]'' উপন্যাস ছিলো একজন তরুণের অপর একটি তরুণীর জন্য ভালোবাসার কাহিনী নিয়ে। ''পাক সার জমিন সাদ বাদে'' তিনি মৌলবাদে দীক্ষিত এক পুরুষকে সবার শেষে প্রেমের কাছে পরাজিত করান। দেখান যে কণকলতা নামের তরুণীর জন্য উপন্যাসের প্রধান নায়ক অপরাধ-জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে আর ''একটি খুনের স্বপ্ন''তে তিনি নায়িকা সুফিয়ার জন্য নায়কের [[প্রতিদানহীন প্রেম|অন্ধ প্রেমকেই]] করে তুলেছিলেন প্রধান উপজীব্য বিষয় যে নায়ক পরে নায়িকাকেই খুন করার চিন্তা করে। ''একটি খুনের স্বপ্ন'' উপন্যাসটি হুমায়ুন আজাদ তার নিজেরই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের (১৯৬৪-১৯৬৮) স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে লিখেছিলেন।


হুমায়ুন আজাদ ''[[ফালি ফালি ক’রে কাটা চাঁদ]]'' (২০০১) উপন্যাসে শিরিন নামের এক কল্পিত ব্যক্তিত্ব সম্পন্না নারীর অবতারণা করেছেন এই মনে করে যে মানসিক সম্পর্ক রাখা একটি গভীর আস্থার ব্যাপার। উপন্যাসটি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী নারীবাদের একটি চিত্র তুলে ধরে। শিরিনের স্বামী রয়েছে যার নাম দেলোয়ার কিন্তু সে একদা খালেদ নামের এক পুরুষের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় নিজের এক প্রকারের সম্মতিতেই। শিরিন পরে তার স্বামী দেলোয়ারের সঙ্গে বাস করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয় এবং খালেদ তাকে প্রেম প্রস্তাব দিলে সেটাও প্রত্যাখ্যান করে।<ref name="সাহস ও সৃষ্টির অদম্য লেখক হুমায়ুন আজাদ"/>
হুমায়ুন আজাদ ''[[ফালি ফালি ক’রে কাটা চাঁদ]]'' (২০০১) উপন্যাসে শিরিন নামের এক কল্পিত ব্যক্তিত্ব সম্পন্না নারীর অবতারণা করেছেন এই মনে করে যে মানসিক সম্পর্ক রাখা একটি গভীর আস্থার ব্যাপার। উপন্যাসটি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী নারীবাদের একটি চিত্র তুলে ধরে। শিরিনের স্বামী রয়েছে যার নাম দেলোয়ার কিন্তু সে একদা খালেদ নামের এক পুরুষের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় নিজের এক প্রকারের সম্মতিতেই। শিরিন পরে তার স্বামী দেলোয়ারের সঙ্গে বাস করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয় এবং খালেদ তাকে প্রেম প্রস্তাব দিলে সেটাও প্রত্যাখ্যান করে।<ref name="সাহস ও সৃষ্টির অদম্য লেখক হুমায়ুন আজাদ"/>


এছাড়াও ''[[নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু]]'' উপন্যাসটি ছিলো একজন বালকের ভেতর দিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রচিত উপন্যাস, যেখানে কিশোর বালকটি গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়। নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু উপন্যাসটিকে তিনি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপন্যাস মনে করতেন। তুলনা করতে গিয়ে এই উপন্যাসকে [[বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়]]ের ''[[পথের পাঁচালী (উপন্যাস)|পথের পাঁচালীর]]'' উপন্যাসের তুলনায় অনেক ভালো উপন্যাস বলে মনে করেছিলেন। পথের পাঁচালীর অপু চরিত্রের সঙ্গে নিজের জীবনের মধুর জলকদর চরিত্রকে তুলনা করতে গিয়ে জলকদর চরিত্রকেই অনেক বেশি শিল্পোত্তীর্ণ চরিত্র মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেছিলেন যে, জলকদরের ভিতর দিয়ে তিনি নিজের কৈশোরজীবনকে দেখেছিলেন।<ref name="সাহস ও সৃষ্টির অদম্য লেখক হুমায়ুন আজাদ">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://arts.bdnews24.com/?p=9716|শিরোনাম=সাহস ও সৃষ্টির অদম্য লেখক হুমায়ুন আজাদ|ওয়েবসাইট=arts.bdnews24.com}}</ref> ''নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু'' উপন্যাসটির আগে কিশোরদের জন্য হুমায়ুন আজাদ এর আগে ''[[আব্বুকে মনে পড়ে]]'' নামে একটি [[উপন্যাসিকা]] লিখেছিলেন যেটা ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো এবং ''আমাদের শহরে একদল দেবদূত'' নামের আরো একটি কিশোর-উপন্যাসিকা ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
এছাড়াও ''[[নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু]]'' উপন্যাসটি ছিলো একজন কিশোর-বালকের কাহিনীর ভেতর দিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রচিত উপন্যাস, যেখানে কিশোর-বালকটি গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়। নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু উপন্যাসটিকে তিনি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপন্যাস মনে করতেন। তুলনা করতে গিয়ে এই উপন্যাসকে [[বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়]]ের ''[[পথের পাঁচালী (উপন্যাস)|পথের পাঁচালীর]]'' উপন্যাসের তুলনায় অনেক ভালো উপন্যাস বলে মনে করেছিলেন। পথের পাঁচালীর অপু চরিত্রের সঙ্গে নিজের জীবনের মধুর জলকদর চরিত্রকে তুলনা করতে গিয়ে জলকদর চরিত্রকেই অনেক বেশি শিল্পোত্তীর্ণ চরিত্র মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেছিলেন যে, জলকদরের ভিতর দিয়ে তিনি নিজের কৈশোরজীবনকে দেখেছিলেন।<ref name="সাহস ও সৃষ্টির অদম্য লেখক হুমায়ুন আজাদ">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://arts.bdnews24.com/?p=9716|শিরোনাম=সাহস ও সৃষ্টির অদম্য লেখক হুমায়ুন আজাদ|ওয়েবসাইট=arts.bdnews24.com|সংগ্রহের-তারিখ=৩০ অক্টোবর ২০১৯|আর্কাইভের-তারিখ=৩১ মে ২০২০|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20200531004318/https://arts.bdnews24.com/?p=9716|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref> ''নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু'' উপন্যাসটির আগে কিশোরদের জন্য হুমায়ুন আজাদ এর আগে ''[[আব্বুকে মনে পড়ে]]'' নামে একটি [[উপন্যাসিকা]] লিখেছিলেন যেটা ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো এবং ''আমাদের শহরে একদল দেবদূত'' নামের আরো একটি কিশোর-উপন্যাসিকা ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।


===ভাষাবিজ্ঞান গবেষণা===
=== ভাষাবিজ্ঞান গবেষণা ===
১৯৬০-এর দশকে আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন পশ্চিমের ভাষাবিজ্ঞানী [[নোম চম্‌স্কি|চম্‌স্কি-উদ্ভাবিত]] [[রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ]] তত্ত্বটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আজাদ এই তত্ত্বের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার [[রূপমূলতত্ত্ব]] তথা [[বাক্যতত্ত্ব]] নিয়ে গবেষণা করেন। এর মাধ্যমে বাংলার ভাষাবিষয়ক গবেষণায় আধুনিক ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূত্রপাত ঘটে। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল ''Pronominalization In Bengali'' (অর্থাৎ ''বাংলা সর্বনামীয়করণ'')। পরবর্তীতে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে একই শিরোনামের এটি ইংরেজি ভাষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের [[দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড]] থেকে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা ভাষার [[বাক্যতত্ত্ব|বাক্যতত্ত্বের]] ওপর ''[[বাক্যতত্ত্ব (গ্রন্থ)|বাক্যতত্ত্ব]]'' নামে একটি বই [[বাংলা একাডেমি]] থেকে প্রকাশ করেন। একই সালে বাংলা একাডেমি থেকে তিনি ''[[বাঙলা ভাষা (গ্রন্থ)|বাঙলা ভাষা]]'' শিরোনামে দুই খণ্ডের একটি দালীলিক সঙ্কলন প্রকাশ করেন, যাতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিগত শতাধিক বছরের বিভিন্ন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকের লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা সংকলিত হয়। এই তিনটি গ্রন্থ বাংলা ভাষাবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে বিবেচিত। তিনি পরবর্তীকালে ''[[তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান]]'' (১৯৮৮) ও ''[[অর্থবিজ্ঞান (গ্রন্থ)|অর্থবিজ্ঞান]]'' (১৯৯৯) শিরোনামে দুইটি সংক্ষিপ্ত প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক লেখেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি বাংলা ভাষার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে মৃত্যুর কারণে তার এই আগ্রহ বাস্তবায়িত হয় নি।
১৯৬০-এর দশকে আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন পশ্চিমের ভাষাবিজ্ঞানী [[নোম চম্‌স্কি|চম্‌স্কি-উদ্ভাবিত]] [[রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ]] তত্ত্বটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আজাদ এই তত্ত্বের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার [[রূপমূলতত্ত্ব]] তথা [[বাক্যতত্ত্ব]] নিয়ে গবেষণা করেন। এর মাধ্যমে বাংলার ভাষাবিষয়ক গবেষণায় আধুনিক ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূত্রপাত ঘটে। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল ''প্রোনোমিনালাইজেশান ইন বেঙলি'' (অর্থাৎ ''বাংলা সর্বনামীয়করণ'')। পরবর্তীতে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে একই শিরোনামের এটি ইংরেজি ভাষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের [[দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড]] থেকে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা ভাষার [[বাক্যতত্ত্ব|বাক্যতত্ত্বের]] ওপর ''[[বাক্যতত্ত্ব (গ্রন্থ)|বাক্যতত্ত্ব]]'' নামে একটি বই [[বাংলা একাডেমি]] থেকে প্রকাশ করেন। একই সালে বাংলা একাডেমি থেকে তিনি ''[[বাঙলা ভাষা (গ্রন্থ)|বাঙলা ভাষা]]'' শিরোনামে দুই খণ্ডের একটি দালীলিক সঙ্কলন প্রকাশ করেন, যাতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিগত শতাধিক বছরের বিভিন্ন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকের লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা সংকলিত হয়। এই তিনটি গ্রন্থ বাংলা ভাষাবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে বিবেচিত। তিনি পরবর্তীকালে ''[[তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান]]'' (১৯৮৮) ও ''[[অর্থবিজ্ঞান (গ্রন্থ)|অর্থবিজ্ঞান]]'' (১৯৯৯) শিরোনামে দুইটি সংক্ষিপ্ত প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক লেখেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি বাংলা ভাষার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে মৃত্যুর কারণে তার এই আগ্রহ বাস্তবায়িত হয় নি।


===প্রবন্ধ===
=== প্রবন্ধ ===
[[চিত্র:লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী (১৯৭৬).jpg|থাম্ব|''[[লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী]]'' (১৯৭৬)]]
[[চিত্র:নারী (১৯৯২).png|থাম্ব|''[[নারী (গ্রন্থ)|নারী]]'' (১৯৯২)]]


১৯৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত '[[লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী]]' বইটি ছিলো হুমায়ুন আজাদের দ্বিতীয় প্রবন্ধ, এর আগে তিনি '[[রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা]]' (১৯৭৩) নামের একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন।
১৯৯২ সালে প্রকাশিত ''[[নারী (গ্রন্থ)|নারী]]'' স্বাধীন বাংলাদেশে নারীবাদ বিষয়ক প্রথম বই।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/eid-magazine/2015/07/16/60947.html|শিরোনাম=আমার বাবা হুমায়ুন আজাদ|লেখক=মৌলি আজাদ|ওয়েবসাইট=[[দৈনিক ইত্তেফাক]]|তারিখ=১৬ জুলাই ২০১৫|সংগ্রহের-তারিখ=১৪ নভেম্বর ২০১৭}}</ref> এই প্রবন্ধগ্রন্থের জন্য তিনি তীব্র সমালোচিত হন। ফলে ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়<ref name="বই নিষিদ্ধের">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.ntvbd.com/opinion/39351/%E0%A6%85%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BE|শিরোনাম=অশ্লীলতার সংজ্ঞা আর বই নিষিদ্ধের অশ্লীলতা|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|লেখক=শারমিন শামস|তারিখ=১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬|সংগ্রহের-তারিখ=৪ মার্চ ২০২০}}</ref> এবং প্রায় সাড়ে চার বছর পরে ২০০০ সালের ৭ মার্চ উচ্চবিচারালয় বইটির নিষিদ্ধকরণ আদেশ বাতিল করে।<ref name="ভেতরে বাইরে"/>

১৯৯২ সালে প্রকাশিত ''[[নারী (গ্রন্থ)|নারী]]'' স্বাধীন বাংলাদেশে নারীবাদ বিষয়ক প্রথম বই।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/eid-magazine/2015/07/16/60947.html|শিরোনাম=আমার বাবা হুমায়ুন আজাদ|লেখক=মৌলি আজাদ|ওয়েবসাইট=[[দৈনিক ইত্তেফাক]]|তারিখ=১৬ জুলাই ২০১৫|সংগ্রহের-তারিখ=১৪ নভেম্বর ২০১৭|আর্কাইভের-তারিখ=১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20170917114300/http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/eid-magazine/2015/07/16/60947.html|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref> এই প্রবন্ধগ্রন্থের জন্য তিনি তীব্র সমালোচিত হন। ফলে ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়<ref name="বই নিষিদ্ধের">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.ntvbd.com/opinion/39351/%E0%A6%85%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BE|শিরোনাম=অশ্লীলতার সংজ্ঞা আর বই নিষিদ্ধের অশ্লীলতা|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|লেখক=শারমিন শামস|তারিখ=১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬|সংগ্রহের-তারিখ=৪ মার্চ ২০২০}}</ref> এবং প্রায় সাড়ে চার বছর পরে ২০০০ সালের ৭ মার্চ উচ্চবিচারালয় বইটির নিষিদ্ধকরণ আদেশ বাতিল করে।<ref name="ভেতরে বাইরে"/>


ফরাসি নারীবাদী দার্শনিক [[সিমোন দ্যা বোভোয়ার]]ের ১৯৪৯ সালের গ্রন্থ ''[[দ্বিতীয় লিঙ্গ]]'' হুমায়ুন আজাদ ২০০১ সালে বাংলায় অনুবাদ করেন। সিমোন দ্যা বোভোয়ারের লেখা তাকে নারীবাদের প্রতি অনেক আকৃষ্ট করেছিল।{{refn|group=বিদ্র|আমি দ্য বোভোয়ার, মিলেট, ফ্রাইডান, গ্রিয়ার, ও অন্যান্যদের বইয়ের পর বই পড়তে থাকি, বোধ করতে থাকি অসামান্য অনুপ্রেরণা।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ)|১৯৯৫|p=৭০}}}}
ফরাসি নারীবাদী দার্শনিক [[সিমোন দ্যা বোভোয়ার]]ের ১৯৪৯ সালের গ্রন্থ ''[[দ্বিতীয় লিঙ্গ]]'' হুমায়ুন আজাদ ২০০১ সালে বাংলায় অনুবাদ করেন। সিমোন দ্যা বোভোয়ারের লেখা তাকে নারীবাদের প্রতি অনেক আকৃষ্ট করেছিল।{{refn|group=বিদ্র|আমি দ্য বোভোয়ার, মিলেট, ফ্রাইডান, গ্রিয়ার, ও অন্যান্যদের বইয়ের পর বই পড়তে থাকি, বোধ করতে থাকি অসামান্য অনুপ্রেরণা।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ)|১৯৯৫|p=৭০}}}}
১৩৬ নং লাইন: ১৩৮ নং লাইন:
ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে প্রকাশিত ''[[আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম]]'' গ্রন্থে তিনি তার স্বপ্নের বাংলাদেশের করুণ অবস্থা দেখে ব্যথিত হয়েছিলেন। বইটিতে তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে তিনি যেরকম প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন তার স্বপ্ন আগেই ভেঙে গেছে, তিনি বাংলাদেশের সমাজের অধঃপতন খুবই আক্ষেপের সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন।<ref name="ভেতরে বাইরে">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ntvbd.com/arts-and-literature/17369/%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%87|শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদ, ভেতর-বাহিরে|লেখক=মৌলি আজাদ|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|তারিখ=১২ আগস্ট ২০১৫|সংগ্রহের-তারিখ=১৪ নভেম্বর ২০১৭}}</ref><ref name="যায় যায় দিন">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=03-03-2015&type=single&pub_no=1119&cat_id=1&menu_id=19&news_type_id=1&index=0 |শিরোনাম=আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? |লেখক=রাশিদ আসকারী |সম্পাদক= |তারিখ=মার্চ ৩, ২০১৫ |ওয়েবসাইট=jjdin.com |প্রকাশক=যায় যায় দিন |অবস্থান=ঢাকা |ভাষা=বাংলা |সংগ্রহের-তারিখ=জুলাই ১০, ২০১৫ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160304224159/http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=03-03-2015&type=single&pub_no=1119&cat_id=1&menu_id=19&news_type_id=1&index=0 |আর্কাইভের-তারিখ=৪ মার্চ ২০১৬ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> তাছাড়া ২০০০ সালে প্রকাশিত ''[[মহাবিশ্ব (গ্রন্থ)|মহাবিশ্ব]]'' ছিলো একটি বিজ্ঞান-প্রবন্ধ।
ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে প্রকাশিত ''[[আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম]]'' গ্রন্থে তিনি তার স্বপ্নের বাংলাদেশের করুণ অবস্থা দেখে ব্যথিত হয়েছিলেন। বইটিতে তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে তিনি যেরকম প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন তার স্বপ্ন আগেই ভেঙে গেছে, তিনি বাংলাদেশের সমাজের অধঃপতন খুবই আক্ষেপের সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন।<ref name="ভেতরে বাইরে">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ntvbd.com/arts-and-literature/17369/%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%87|শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদ, ভেতর-বাহিরে|লেখক=মৌলি আজাদ|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|তারিখ=১২ আগস্ট ২০১৫|সংগ্রহের-তারিখ=১৪ নভেম্বর ২০১৭}}</ref><ref name="যায় যায় দিন">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=03-03-2015&type=single&pub_no=1119&cat_id=1&menu_id=19&news_type_id=1&index=0 |শিরোনাম=আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? |লেখক=রাশিদ আসকারী |সম্পাদক= |তারিখ=মার্চ ৩, ২০১৫ |ওয়েবসাইট=jjdin.com |প্রকাশক=যায় যায় দিন |অবস্থান=ঢাকা |ভাষা=বাংলা |সংগ্রহের-তারিখ=জুলাই ১০, ২০১৫ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160304224159/http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=03-03-2015&type=single&pub_no=1119&cat_id=1&menu_id=19&news_type_id=1&index=0 |আর্কাইভের-তারিখ=৪ মার্চ ২০১৬ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> তাছাড়া ২০০০ সালে প্রকাশিত ''[[মহাবিশ্ব (গ্রন্থ)|মহাবিশ্ব]]'' ছিলো একটি বিজ্ঞান-প্রবন্ধ।


==ব্যক্তিগত জীবন==
== ব্যক্তিগত জীবন ==
হুমায়ুন আজাদ ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সময় লতিফা কোহিনুর নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচিত হন এবং ১৯৭৫ সালের ১২ই অক্টোবর তাদের বিয়ে হয় টেলিফোনে; আজাদ তখন স্কটল্যান্ডে আর লতিফা বাংলাদেশে ছিলেন।{{refn|group=বিদ্র|১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এম.এ. ক্লাশে পড়ার সময় আমার মা বাবার প্রথম পরিচয় হয়।. . .মাকে পাবার জন্য বাবা ছিলেন এককথায় নাছোড়বান্দা। মা প্রথম প্রথম রাগ করলেও ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। . . .শুনেছি মা’র পরিবার প্রথমদিকে বাবাকে খুব বেশি পছন্দ করেনি কিন্তু যখন তারা দেখেছে বাবা মা’র প্রতি একনিষ্ঠ তখন নানা সম্মতি দিয়েছিলেন এবং তার জন্য বাবাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ৭ বছর। তাদের যে বিয়ে হয়েছে তাও অনেকটা প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়েই। ১৯৭৫-এর ১২ অক্টোবর মা ও বাবার দুই পরিবারের সম্মতিতে টেলিফোনের মাধ্যমে বিয়ে হয়।. . .বাবা বিয়ের দিন ছিলেন স্কটল্যান্ডে আর মা ঢাকায়।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|মৌলি আজাদ (হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা)|২০১১|p=১৯}}}} তাদের দুই কন্যা মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ এবং এক পুত্র অনন্য আজাদ। জ্যেষ্ঠ কন্যা মৌলি আজাদ [[বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (বাংলাদেশ)|বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের]] সহকারী সচিব হিসাবে দায়িত্বরত।
হুমায়ুন আজাদ ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সময় লতিফা কোহিনুর নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচিত হন এবং ১৯৭৫ সালের ১২ই অক্টোবর তাদের বিয়ে হয় টেলিফোনে; আজাদ তখন স্কটল্যান্ডে আর লতিফা বাংলাদেশে ছিলেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.banglatribune.com/678272/%E0%A6%AC%E0%A6%87%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8B-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%A7%E0%A7%81-%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AB%E0%A6%BE|শিরোনাম=বইগুলো সাজিয়ে রেখেছি, শুধু তিনি নেই : লতিফা কোহিনূর|ওয়েবসাইট=banglatribune.com|তারিখ=২৮ এপ্রিল ২০২১|সংগ্রহের-তারিখ=৯ মে ২০২১|আর্কাইভের-তারিখ=৯ মে ২০২১|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20210509112425/https://www.banglatribune.com/678272/%E0%A6%AC%E0%A6%87%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8B-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%A7%E0%A7%81-%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AB%E0%A6%BE|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref>{{refn|group=বিদ্র|১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এম.এ. ক্লাশে পড়ার সময় আমার মা বাবার প্রথম পরিচয় হয়।. . .মাকে পাবার জন্য বাবা ছিলেন এককথায় নাছোড়বান্দা। মা প্রথম প্রথম রাগ করলেও ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। . . .শুনেছি মা’র পরিবার প্রথমদিকে বাবাকে খুব বেশি পছন্দ করেনি কিন্তু যখন তারা দেখেছে বাবা মা’র প্রতি একনিষ্ঠ তখন নানা সম্মতি দিয়েছিলেন এবং তার জন্য বাবাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ৭ বছর। তাদের যে বিয়ে হয়েছে তাও অনেকটা প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়েই। ১৯৭৫-এর ১২ অক্টোবর মা ও বাবার দুই পরিবারের সম্মতিতে টেলিফোনের মাধ্যমে বিয়ে হয়।. . .বাবা বিয়ের দিন ছিলেন স্কটল্যান্ডে আর মা ঢাকায়।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|মৌলি আজাদ (হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা)|২০১১|p=১৯}}}} তাদের দুই কন্যা মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ এবং এক পুত্র অনন্য আজাদ। জ্যেষ্ঠ কন্যা মৌলি আজাদ [[বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (বাংলাদেশ)|বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের]] সহকারী সচিব হিসাবে দায়িত্বরত।


===বিশ্বাস ও দর্শন===
=== বিশ্বাস ও দর্শন ===
আজাদ ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না এবং তিনি সরাসরি ধর্মের সমালোচনা করে লেখেননি তবে ধর্মীয় মৌলবাদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করতেন এবং এটি বিভিন্ন ভাবে তার লেখায় প্রকাশ পেয়েছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ntvbd.com/opinion/126999/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A7%80-%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6|শিরোনাম=প্রথাবিরোধী যোদ্ধা হুমায়ুন আজাদ|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|তারিখ=28 April 2017|সংগ্রহের-তারিখ=2 November 2017}}</ref> তিনি বাংলাদেশের সমাজে চলা রক্ষণশীলতা এবং প্রথার বিরোধিতা করতেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.ntvbd.com/arts-and-literature/210227/%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%B8-%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%B0--%E0%A6%AE%E0%A7%8C%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6|শিরোনাম=সব কিছু তুচ্ছ করার সাহস ছিলো তাঁর - মৌলি আজাদ|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|তারিখ=১২ আগস্ট ২০১৮|সংগ্রহের-তারিখ=৪ মার্চ ২০২০}}</ref> সর্বপ্রথম [[গুস্তাভ ফ্লবেয়ার|গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের]] আদলে ১৯৯১ প্রকাশিত ''[[হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ|প্রবচনগুচ্ছ]]'' ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল। হুমায়ুন আজাদের লেখালেখিতে উদারপন্থা, বিজ্ঞানমনস্কতার এবং একই সঙ্গে দ্রোহের ছাপ স্পষ্ট ছিলো। একটি বৈষম্যহীন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার স্বপ্ন তিনি দেখতেন। তিনি তার লেখনীতে প্রকাশ করেছিলেন,
আজাদ ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না এবং তিনি সরাসরি ধর্মের সমালোচনা করে লেখেননি তবে ধর্মীয় মৌলবাদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করতেন এবং এটি বিভিন্ন ভাবে তার লেখায় প্রকাশ পেয়েছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ntvbd.com/opinion/126999/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A7%80-%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6|শিরোনাম=প্রথাবিরোধী যোদ্ধা হুমায়ুন আজাদ|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|তারিখ=28 April 2017|সংগ্রহের-তারিখ=2 November 2017}}</ref> তিনি বাংলাদেশের সমাজে চলা রক্ষণশীলতা এবং প্রথার বিরোধিতা করতেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.ntvbd.com/arts-and-literature/210227/%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%B8-%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%B0--%E0%A6%AE%E0%A7%8C%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6|শিরোনাম=সব কিছু তুচ্ছ করার সাহস ছিলো তাঁর - মৌলি আজাদ|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|তারিখ=১২ আগস্ট ২০১৮|সংগ্রহের-তারিখ=৪ মার্চ ২০২০}}</ref> সর্বপ্রথম [[গুস্তাভ ফ্লবেয়ার|গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের]] আদলে ১৯৯১ প্রকাশিত ''[[হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ|প্রবচনগুচ্ছ]]'' ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল। হুমায়ুন আজাদের লেখালেখিতে উদারপন্থা, বিজ্ঞানমনস্কতার এবং একই সঙ্গে দ্রোহের ছাপ স্পষ্ট ছিলো। একটি বৈষম্যহীন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার স্বপ্ন তিনি দেখতেন। তিনি তার লেখনীতে প্রকাশ করেছিলেন,
{{উক্তি|আমি এমন একটি সমাজ চাই যে সমাজ বলা যাক পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজের চূড়ান্ত রূপ। সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নে বিভোর আমি নই, আমি চাই সবাই স্বচ্ছল থাকবে - জ্ঞানচর্চা, আনন্দ, উল্লাস এবং যতপ্রথা রয়েছে সেসব অতিক্রম করে মানুষ সম্পূর্ণ মানবিক জীবন যাপন করবে।{{refn|group=বিদ্র|আমি এমন একটি সমাজ চাই যে সমাজ বলা যাক পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজের চূড়ান্ত রূপ। সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নে বিভোর আমি নই, আমি চাই সবাই স্বচ্ছল থাকবে - জ্ঞানচর্চা, আনন্দ, উল্লাস এবং যতপ্রথা রয়েছে সেসব অতিক্রম করে মানুষ সম্পূর্ণ মানবিক জীবন যাপন করবে।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ)|১৯৯৫|p=২১}}}}|}}
{{উক্তি|আমি এমন একটি সমাজ চাই যে সমাজ বলা যাক পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজের চূড়ান্ত রূপ। সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নে বিভোর আমি নই, আমি চাই সবাই সচ্ছল থাকবে - জ্ঞানচর্চা, আনন্দ, উল্লাস এবং যতপ্রথা রয়েছে সেসব অতিক্রম করে মানুষ সম্পূর্ণ মানবিক জীবন যাপন করবে।{{refn|group=বিদ্র|আমি এমন একটি সমাজ চাই যে সমাজ বলা যাক পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজের চূড়ান্ত রূপ। সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নে বিভোর আমি নই, আমি চাই সবাই সচ্ছল থাকবে - জ্ঞানচর্চা, আনন্দ, উল্লাস এবং যতপ্রথা রয়েছে সেসব অতিক্রম করে মানুষ সম্পূর্ণ মানবিক জীবন যাপন করবে।: (প্রাথমিক উৎস){{sfn|আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ)|১৯৯৫|p=২১}}}}|}}


=== রাজনৈতিক-সামাজিক সমালোচনা ===
=== রাজনৈতিক-সামাজিক সমালোচনা ===
১৪৭ নং লাইন: ১৪৯ নং লাইন:


=== হত্যা প্রচেষ্টা ===
=== হত্যা প্রচেষ্টা ===
২০০৩ সালে [[ইত্তেফাক]] পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় হুমায়ুন আজাদের ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল। ২০০৪-এর [[একুশে গ্রন্থমেলা|একুশে বইমেলা]]তে উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়, এবং বিভিন্ন স্থানে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। তিনি এই বইটিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে [[বাংলাদেশের স্বাধীনতা]]র বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল [[বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী|জামায়াতে ইসলামী]]কে [[ফ্যাসিবাদ|ফ্যাসিবাদী]] সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন পরোক্ষভাবে এবং এর কঠোর সমালোচনা করেন। তারই জের ধরে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের [[ফেব্রুয়ারি ২৭|২৭ ফেব্রুয়ারি]] [[বাংলা একাডেমী|বাংলা একাডেমিতে]] অনুষ্ঠিত [[একুশে বইমেলা|বইমেলা]] থেকে বেরিয়ে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন তিনি। প্রথমে বাংলাদেশের [[সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (ঢাকা)|সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা]]তে<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archive.thedailystar.net/2004/03/04/d4030401066.htm|শিরোনাম=President, PM visit Prof Azad at CMH|ওয়েবসাইট=[[দ্য ডেইলি স্টার]]|তারিখ=৪ মার্চ ২০০৪|সংগ্রহের-তারিখ=৪ মার্চ ২০২০}}</ref> এবং পরে থাইল্যান্ডে নিবিড় চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি কিছুটা সুস্থ হন। [[জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ|জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ সংক্ষেপে জেএমবি]] নামক ইসলামি জঙ্গী সংগঠনের একজন শীর্ষনেতা [[শায়খ আব্দুর রহমান]] পরবর্তীতে হুমায়ুন আজাদ এবং একইসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইউনুসকে হত্যার নির্দেশ দেবার কথা স্বীকার করে।<ref name="বিবিসি">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.bbc.co.uk/bengali/news/story/2006/03/060309_karahmanconfession.shtml |শিরোনাম=জেএমবি নেতার স্বীকারোক্তি |সংগ্রহের-তারিখ=২০১৪-০১-০৬ |প্রকাশক=[[বিবিসি]]}}</ref> এই হত্যা প্রচেষ্টার মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য উচ্চ আদালত ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে আদেশ প্রদান করে।
২০০৩ সালে [[ইত্তেফাক]] পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় হুমায়ুন আজাদের ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল। ২০০৪-এর [[একুশে গ্রন্থমেলা|একুশে বইমেলা]]তে উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়, এবং বিভিন্ন স্থানে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। তিনি এই উপন্যাসটিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে [[বাংলাদেশের স্বাধীনতা]]র বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল [[বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী|জামায়াতে ইসলামী]]কে পরোক্ষভাবে [[ফ্যাসিবাদ|ফ্যাসিবাদী]] সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এর কঠোর সমালোচনা করেন, উপন্যাসটি তিনি ১৯৭১ সালেকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন। তারই জের ধরে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের [[ফেব্রুয়ারি ২৭|২৭ ফেব্রুয়ারি]] [[বাংলা একাডেমী|বাংলা একাডেমিতে]] অনুষ্ঠিত [[একুশে বইমেলা|বইমেলা]] থেকে বেরিয়ে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী [[খালেদা জিয়া]]র নির্দেশে আজাদ প্রথমে বাংলাদেশের [[সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (ঢাকা)|সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা]]তে চিকিৎসা লাভ করেন যেখানে প্রধানমন্ত্রী তাকে দেখতে গিয়েছিলেন<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archive.thedailystar.net/2004/03/04/d4030401066.htm|শিরোনাম=President, PM visit Prof Azad at CMH|ওয়েবসাইট=[[দ্য ডেইলি স্টার]]|তারিখ=৪ মার্চ ২০০৪|সংগ্রহের-তারিখ=৪ মার্চ ২০২০|আর্কাইভের-তারিখ=৪ মার্চ ২০২০|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20200304100606/http://archive.thedailystar.net/2004/03/04/d4030401066.htm|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref>, পরে হুমায়ুন আজাদকে সরকারিভাবেই থাইল্যান্ডে পাঠানো হয় এবং তিনি সেখান থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। হুমায়ুন আজাদের উপর কারা হামলা করেছিলো তা অনেক দিন ধরে অজানা ছিলো; [[জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ|জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ সংক্ষেপে জেএমবি]] নামক ইসলামি জঙ্গী সংগঠনের একজন শীর্ষনেতা [[শায়খ আব্দুর রহমান]] পরবর্তীতে হুমায়ুন আজাদ এবং একইসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইউনুসকে হত্যার নির্দেশ দেবার কথা স্বীকার করেছিলো।<ref name="বিবিসি">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.bbc.co.uk/bengali/news/story/2006/03/060309_karahmanconfession.shtml |শিরোনাম=জেএমবি নেতার স্বীকারোক্তি |সংগ্রহের-তারিখ=২০১৪-০১-০৬ |প্রকাশক=[[বিবিসি]]}}</ref> এই হত্যা প্রচেষ্টার মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য উচ্চ আদালত ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে আদেশ প্রদান করে।


== সমালোচনা ==
== সমালোচনা ==
২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি [[বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী]]র তৎকালীন সংসদ সদস্য [[দেলোয়ার হোসেন সাঈদী]] [[জাতীয় সংসদ|জাতীয় সংসদে]] হুমায়ুন আজাদের ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' (২০০৪)<ref name="বই নিষিদ্ধের"/> উপন্যাসটিকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য দেন এবং এ ধরনের লেখকদের লেখা বন্ধ করতে ব্ল্যাসফেমি আইন (ধর্ম অবমাননা বিরোধী আইন) প্রণয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article468793.bdnews|শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় সাঈদীর রিমান্ড|শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=১ আগস্ট ২০১০|ওয়েবসাইট=[[বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম]]|সংগ্রহের-তারিখ=১১ ডিসেম্বর ২০২০}}</ref> এই উপন্যাসটিতে হুমায়ুন আজাদ তীব্র রূপক-ঋণাত্মক ভাবে বাংলাদেশের একটি কাল্পনিক মৌলবাদী সংগঠনের চিত্র তুলে ধরেছিলেন।
২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি [[বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী]]র তৎকালীন সংসদ সদস্য [[দেলোয়ার হোসেন সাঈদী]] [[জাতীয় সংসদ|জাতীয় সংসদে]] হুমায়ুন আজাদের ''[[পাক সার জমিন সাদ বাদ]]'' (২০০৪)<ref name="বই নিষিদ্ধের"/> উপন্যাসটিকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য দেন এবং এ ধরনের লেখকদের লেখা বন্ধ করতে ব্ল্যাসফেমি আইন (ধর্ম অবমাননা বিরোধী আইন) প্রণয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article468793.bdnews|শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় সাঈদীর রিমান্ড|শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=১ আগস্ট ২০১০|ওয়েবসাইট=[[বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম]]|সংগ্রহের-তারিখ=১১ ডিসেম্বর ২০২০|আর্কাইভের-তারিখ=৬ মার্চ ২০২১|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20210306053112/https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article468793.bdnews|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref> এই উপন্যাসটিতে হুমায়ুন আজাদ তীব্র রূপক-ঋণাত্মক ভাবে বাংলাদেশের একটি কাল্পনিক মৌলবাদী সংগঠনের চিত্র তুলে ধরেছিলেন।


== পুরস্কার এবং সম্মাননা ==
== পুরস্কার এবং সম্মাননা ==
{| class="wikitable sortable"
{| class="wikitable sortable"
|+ '''পুরস্কারের তালিকা'''
|+ '''পুরস্কারের তালিকা'''
|- style="background:#ccc;"
|- style="background:#ccc;"
! পুরস্কার
! পুরস্কার
১৮৩ নং লাইন: ১৮৫ নং লাইন:


== মৃত্যু ==
== মৃত্যু ==
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি [[হাইনরিখ হাইনে|হাইনরিখ হাইনের]] উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর [[আগস্ট ৭|৭ আগস্ট]] জার্মান কবি [[হাইনরিখ হাইনে|হাইনরিখ হাইনের]] ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।<ref name="দৈনিক সমকাল">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://samakal.com.bd/details.php?news=17&view=archiev&y=2011&m=08&d=11&action=main&menu_type=&option=single&news_id=181353&pub_no=779&type= |শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদ |সংগ্রহের-তারিখ=২০১৪-০১-০৭ |প্রকাশক=samakal.com.bd |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20140806063632/http://samakal.com.bd/details.php?news=17&view=archiev&y=2011&m=08&d=11&action=main&menu_type=&option=single&news_id=181353&pub_no=779&type= |আর্কাইভের-তারিখ=৬ আগস্ট ২০১৪ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি [[হাইনরিখ হাইনে|হাইনরিখ হাইনের]] উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর [[আগস্ট ৭|৭ আগস্ট]] জার্মান কবি [[হাইনরিখ হাইনে|হাইনরিখ হাইনের]] ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।<ref name="দৈনিক সমকাল">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://samakal.com.bd/details.php?news=17&view=archiev&y=2011&m=08&d=11&action=main&menu_type=&option=single&news_id=181353&pub_no=779&type= |শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদ |সংগ্রহের-তারিখ=২০১৪-০১-০৭ |প্রকাশক=samakal.com.bd |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20140806063632/http://samakal.com.bd/details.php?news=17&view=archiev&y=2011&m=08&d=11&action=main&menu_type=&option=single&news_id=181353&pub_no=779&type= |আর্কাইভের-তারিখ=৬ আগস্ট ২০১৪ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>


২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের [[আগস্ট ১১|১১ আগস্ট]] রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। [[আগস্ট ১২|১২ আগস্ট]] আবাসস্থলের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর জার্মান সরকারের তত্ত্বাবধানে মিউনিখে তার নিজ বাসভবনে পাওয়া সব জিনিসপত্র ঢাকায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। ওই জিনিসপত্রের ভেতরেই পাওয়া যায় তার হাতের লেখা তিনটি চিঠি। চিঠি তিনটি আলাদা তিনটি পোস্ট কার্ডে লিখেছেন বড় মেয়ে মৌলিকে, ছোট মেয়ে স্মিতাকে এবং একমাত্র ছেলে অনন্য আজাদকে। অনুমান করা হয়, ওই লেখার অক্ষরগুলোই ছিল তার জীবনের শেষ লেখা।<ref name="দৈনিক সংবাদ">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://thedailysangbad.com/details.php?news=23&action=main&option=all&menu_type=&pub_no=87 |শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদক |সংগ্রহের-তারিখ=২০১৪-০১-০৭ |প্রকাশক=thedailysangbad.com |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160304211644/http://thedailysangbad.com/details.php?news=23&action=main&option=all&menu_type=&pub_no=87 |আর্কাইভের-তারিখ=৪ মার্চ ২০১৬ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> তার মরদেহ কফিনে করে জার্মানি থেকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] কেন্দ্রীয় [[মসজিদ|মসজিদে]] [[জানাযা|জানাযার]] নামাজ শেষে তার মরদেহ রাড়িখালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয় এবং পরে তার কবর সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে একটি বইয়ের মত করে বানানো হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ntvbd.com/arts-and-literature/17418/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6--%E0%A6%AE%E0%A7%8C%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6|শিরোনাম=বাবার স্বপ্ন ছিল সেক্যুলার বাংলাদেশ : মৌলি আজাদ|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|তারিখ=12 August 2015|সংগ্রহের-তারিখ=2 November 2017}}</ref>
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট আবাসস্থলের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর জার্মান সরকারের তত্ত্বাবধানে মিউনিখে তার নিজ বাসভবনে পাওয়া সব জিনিসপত্র ঢাকায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। ওই জিনিসপত্রের ভেতরেই পাওয়া যায় তার হাতের লেখা তিনটি চিঠি। চিঠি তিনটি আলাদা তিনটি পোস্ট কার্ডে লিখেছেন বড় মেয়ে মৌলিকে, ছোট মেয়ে স্মিতাকে এবং একমাত্র ছেলে অনন্য আজাদকে। অনুমান করা হয়, ওই লেখার অক্ষরগুলোই ছিল তার জীবনের শেষ লেখা।<ref name="দৈনিক সংবাদ">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://thedailysangbad.com/details.php?news=23&action=main&option=all&menu_type=&pub_no=87 |শিরোনাম=হুমায়ুন আজাদক |সংগ্রহের-তারিখ=২০১৪-০১-০৭ |প্রকাশক=thedailysangbad.com |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160304211644/http://thedailysangbad.com/details.php?news=23&action=main&option=all&menu_type=&pub_no=87 |আর্কাইভের-তারিখ=৪ মার্চ ২০১৬ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> তার মরদেহ কফিনে করে জার্মানি থেকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] কেন্দ্রীয় [[মসজিদ|মসজিদে]] [[জানাযা|জানাযার]] নামাজ শেষে তার মরদেহ রাড়িখালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয় এবং পরে তার কবর সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে একটি বইয়ের মত করে বানানো হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ntvbd.com/arts-and-literature/17418/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6--%E0%A6%AE%E0%A7%8C%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6|শিরোনাম=বাবার স্বপ্ন ছিল সেক্যুলার বাংলাদেশ : মৌলি আজাদ|ওয়েবসাইট=ntvbd.com|তারিখ=12 August 2015|সংগ্রহের-তারিখ=2 November 2017}}</ref>


==টীকা==
== টীকা ==
{{সূত্র তালিকা|group="বিদ্র"|3}}
{{সূত্র তালিকা|group="বিদ্র"|3}}


==তথ্যসূত্র==
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা|3|refs=
{{সূত্র তালিকা|3|refs=
}}
}}
১৯৯ নং লাইন: ২০১ নং লাইন:
* {{বই উদ্ধৃতি |লেখক=হুমায়ুন আজাদ |বছর=১৯৯৫ |শিরোনাম=আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন |ইউআরএল= |সংস্করণ=প্রথম |অবস্থান=ঢাকা |প্রকাশক=আগামী প্রকাশনী |প্রকাশনার-তারিখ=ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ |পাতা=|আইএসবিএন=978-984-04-1542-7 |সূত্র=harv}}
* {{বই উদ্ধৃতি |লেখক=হুমায়ুন আজাদ |বছর=১৯৯৫ |শিরোনাম=আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন |ইউআরএল= |সংস্করণ=প্রথম |অবস্থান=ঢাকা |প্রকাশক=আগামী প্রকাশনী |প্রকাশনার-তারিখ=ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ |পাতা=|আইএসবিএন=978-984-04-1542-7 |সূত্র=harv}}


==বহিঃসংযোগ==
== বহিঃসংযোগ ==
{{কমন্স বিষয়শ্রেণী}}
{{কমন্স বিষয়শ্রেণী}}


*{{বাংলাপিডিয়া}}
* {{বাংলাপিডিয়া}}
*{{আইএমডিবি নাম}}
* {{আইএমডিবি নাম}}
*{{গুডরিড্‌স লেখক}}
* {{গুডরিড্‌স লেখক}}


{{হুমায়ুন আজাদ}}
{{হুমায়ুন আজাদ}}
২২৪ নং লাইন: ২২৬ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী কবি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী কবি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী পুরুষ লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী পুরুষ লেখক]]
২৩৫ নং লাইন: ২৩৬ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী]]
[[বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী]]
[[বিষয়শ্রেণী:এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী]]
[[বিষয়শ্রেণী:এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী]]
[[বিষয়শ্রেণী:চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক]]
[[বিষয়শ্রেণী:চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষক]]
[[বিষয়শ্রেণী:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক]]
[[বিষয়শ্রেণী:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক]]
[[বিষয়শ্রেণী:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক]]
[[বিষয়শ্রেণী:মুন্সীগঞ্জ জেলার লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক]]
[[বিষয়শ্রেণী:মুন্সিগঞ্জ জেলার ব্যক্তি]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর ঔপন্যাসিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর ঔপন্যাসিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর কবি]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর কবি]]
২৪৭ নং লাইন: ২৪৬ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী নারীবাদী লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী নারীবাদী লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী পুরুষ ঔপন্যাসিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী পুরুষ ঔপন্যাসিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বিক্রমপুরের ব্যক্তি]]
[[বিষয়শ্রেণী:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক]]
[[বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী পুরুষ কবি]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী]]

১৮:২২, ১০ মার্চ ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদের আলোকচিত্র
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ
জন্মহুমায়ুন কবীর
(১৯৪৭-০৪-২৮)২৮ এপ্রিল ১৯৪৭
কামারগাঁ, শ্রীনগর, বিক্রমপুর (বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ), ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু১২ আগস্ট ২০০৪(2004-08-12) (বয়স ৫৭)
মিউনিখ, জার্মানি
সমাধিস্থলরাঢ়িখাল
পেশা
  • কবি
  • ঔপন্যাসিক
  • গল্পকার
  • সমালোচক
  • ভাষাবিজ্ঞানী
  • অধ্যাপক
  • গবেষক
জাতীয়তা
শিক্ষাস্নাতক এবং স্নাতকোত্তর (বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
পিএইচডি (ভাষাবিজ্ঞান, এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ধরনসমূহআধুনিক
সাহিত্য আন্দোলনপ্রথাবিরোধিতা
উল্লেখযোগ্য রচনাঅলৌকিক ইস্টিমার
সব কিছু ভেঙে পড়ে
নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু
একটি খুনের স্বপ্ন
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার
সক্রিয় বছর১৯৭৩, ১৯৮০ - ২০০৪
দাম্পত্যসঙ্গীলতিফা কোহিনূর (বি. ১৯৭৫; মৃত্যুপূর্ব ২০০৪)
সন্তান
  • মৌলি আজাদ
  • স্মিতা আজাদ
  • অনন্য আজাদ
আত্মীয়
  • আবদুর রাশেদ (পিতা)
  • জোবেদা খাতুন (মাতা)

স্বাক্ষরহুমায়ুন আজাদের স্বাক্ষর

হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১২ আগস্ট ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ;[১] ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২৬ শ্রাবণ ১৪১১ বঙ্গাব্দ) একজন বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতিক ভাষ্যকার, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক, এবং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদের ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও অধিক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে তার নারীবাদী গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ নারী প্রকাশের পর বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর ধরে বইটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল। এটি তার বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসাবেও স্বীকৃত। এছাড়াও তার পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসটি পাঠকমহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তার রচিত প্রবচন সংকলন ১৯৯২ সালে হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ নামে প্রকাশিত হয়। তাকে ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২০০৩ সালে তার রচিত কিশোরসাহিত্য ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না (১৯৮৫) এবং আব্বুকে মনে পড়ে (১৯৯২) জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছিলো।

হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত ধ্যানধারা সচেতনভাবে পরিহার করতেন। তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য পল্লীপ্রেম, নর-নারীরপ্রেম, প্রগতিবাদিতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা, সামরিক শাসনএকনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা এবং নারীবাদের জন্য পরিচিত। তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অভীষ্ট তার সাহিত্যকে প্রভাবান্বিত করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসে মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে ২০০৪ সালে তিনি হামলার শিকার হন[২]

জীবন

প্রাথমিক জীবন

হুমায়ুন আজাদ ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে তার মাতামহের বাড়ি, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে বাংলাদেশ) অধীন বিক্রমপুরের কামারগাঁয় জন্ম নেন; যেটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার অন্তর্গত।[৩] তার জন্ম নাম ছিল হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর নাম পরিবর্তনের মাধ্যম তিনি বর্তমান নাম ধারণ করেন।[১] তার বাবা আবদুর রাশেদ প্রথম জীবনে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা[১] ও পোস্টমাস্টার পদে চাকরি করতেন,[৪] পরে ব্যবসায়ী হন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন।[৫] মা জোবেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী,[১] যিনি ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[৬] তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে আজাদ ছিলেন পিতামাতার দ্বিতীয় পুত্রসন্তান।[বিদ্র ১] ছেলেবেলায় তার ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি রাড়িখাল গ্রামে বেড়ে ওঠেন।[৮] পরবর্তীতে তার বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন ভাবে রাড়িখাল গ্রামের বর্ণনা উঠে এসেছে এবং এ গ্রাম নিয়ে তিনি "রাড়িখাল : ঘুমের ভেতরে নিবিড় শ্রাবণধারা" নামে একটি লেখা প্রকাশ করেন।[৭] আজাদের মতে তার শৈশব ও কৈশোর ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ খণ্ড, যে সময়ের কথা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না (১৯৮৫), নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু (২০০০), শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা (২০০২) এবং বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে।[৯] আজাদের গ্রামের মাইল দুয়েক দক্ষিণে রয়েছে পদ্মা নদী, রাতের বেলায় নদীতে স্টিমার চলার ধ্বনি শৈশবে তাকে প্রভাবিত করায় তিনি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম দেন অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩)।[১০]

১৯৫২ সালে আজাদ দক্ষিণ রাড়িখাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইনফ্যান্ট (প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা) শ্রেণীতে ভর্তি হন,[১১] সেখানে তিনি ইনফ্যান্ট থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত মোট চার বছর অধ্যয়ন করেন।[১২] চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার জন্য তিনি স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন।[১৩] ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। এ বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[১][১৪]

উচ্চশিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হুমায়ুন আজাদ (মাঝে)

১৯৬২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য আজাদ ঢাকায় চলে আসেন। মানবিক বিভাগে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবার ইচ্ছায় ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন।[১৫] ১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।[১] এরপর একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[১] উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।[১৬] হুমায়ুন আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালীন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রাবাসে থাকতেন।

কর্মজীবন

হুমায়ুন আজাদ
চট্টগ্রাম কলেজ
প্রভাষক
কাজের মেয়াদ
১৯৬৯ – ১৯৬৯
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রভাষক
কাজের মেয়াদ
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০ – ১৯৭০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রভাষক
কাজের মেয়াদ
১২ ডিসেম্বর ১৯৭০ – ১৯৭৬
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রভাষক
কাজের মেয়াদ
১ নভেম্বর ১৯৭৮ – ১৯৮৬
অধ্যাপক
কাজের মেয়াদ
১৯৮৬ – ২০০৪

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ২২ বছর বয়সে তার কর্মজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসাবে।[১৭] সেখানে কিছুকাল কর্মরত থাকার পর ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।[১৮] একই বছর ১২ ডিসেম্বর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন।[১৯] ১৯৭৩ সালে তার প্রথম গবেষণা গ্রন্থ রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা[২০] এবং একইবছর সেপ্টেম্বরে কাব্যগ্রন্থ অলৌকিক ইস্টিমার প্রকাশিত হয়। সে বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ভাষাবিজ্ঞান পড়তে স্কটল্যান্ডে চলে যান।[২১] ১৯৭৬ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[১] তার গবেষণার বিষয় ছিল বাংলা ভাষায় সর্বনামীয়করণ। এই গবেষণাপত্র ১৯৮৩ সালে প্রোনোমিনালাইজেশন ইন বেঙ্গলি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়। এডিনবরায় গবেষণাকালীন সময়ে তিনি রবার্ট ক্যাল্ডরের সহযোগিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ এবং নিজের কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলেন, যেগুলি "লিডস বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল" এবং এডিনবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের "চ্যাপম্যান" সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।[২০]

১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন[১][২১] এবং পরবর্তীকালে বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।[১]

সাহিত্যকর্ম

হুমায়ুন আজাদের কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার শুরু হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর তবে বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন[২০] তার "ঘড়ি বলে টিক টিক" শিরোনামে প্রথম লেখা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেফাকের শিশুপাতা কচিকাঁচার আসরে। শৈশবে পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকায় একাধিক প্রবন্ধ লিখেছিলেন।[২২] তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৭। তার প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমূহ জীবদ্দশায় হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৩) ও কাব্যসংগ্রহ (১৯৯৮) এবং মৃত্যুর পরে কাব্যসমগ্র (২০০৫) বইয়ে প্রকাাশিত হয়। তিনি ১২টি উপন্যাস লিখেছেন। তার উপন্যাসসমূহ উপন্যাসসমগ্র ১ (২০০১)[২৩], উপন্যাসসমগ্র ২ (২০০২) এবং উপন্যাসসমগ্র ৩ (২০০৩) বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৬) নামে ১টি মৌলিক ছোটগল্পের বই লিখেছেন। এছাড়াও তার ৮টি কিশোরসাহিত্য, এবং ৮টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক বই রয়েছে।

কবিতা

প্রথম কাব্যগ্রন্থ অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩)

হুমায়ুন আজাদ কবিতার দ্বারা লেখালেখিতে হাত দিয়েছিলেন, তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখনই তিনি মূলত কবিতা রচনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন শেষ করার পরেও ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি কবিতা লিখতে থাকেন।[বিদ্র ২] ষাটের দশকের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, ঘৃণা, বিবমিষা, প্রেম ইত্যাদি তার কবিতার প্রধান বিষয় ছিলো। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অলৌকিক ইস্টিমার যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩-এর জানুয়ারিতে। কাব্যগ্রন্থটি তিনি উৎসর্গ করেন ১৯৬৮-১৯৭২ সালে তার নিজেরই কাটানো রাত-দিনগুলোর উদ্দেশ্যে। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ জ্বলো চিতাবাঘ প্রথম প্রকাশিত হয় মার্চ ১৯৮০ সালে। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে, তৃতীয় কাব্যগ্রন্থটি তিনি সমসাময়িক দুই বাংলাদেশী লেখক হুমায়ূন আহমেদ এবং ইমদাদুল হক মিলনকে উৎসর্গ করেছেন। প্রত্যুত্তরে ইমদাদুল হক মিলন তার বনমানুষ উপন্যাসটি হুমায়ুন আজাদকে উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের মার্চে প্রকাশিত হয় তার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ যতোই গভীরে যাই মধু যতোই ওপরে যাই নীল। তার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ সালে। এর আট বছর পর ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় তার ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু। কাব্যগ্রন্থটি আজাদ তার 'প্রিয় মৃতদের জন্য' উৎসর্গ করেন। সপ্তম এবং শেষ কাব্যগ্রন্থ পেরোনোর কিছু নেই প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ সালে। জীবদ্দশায় তার সাতটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তবে আজাদের মৃত্যুর পর ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ সালে এই সাতটি কাব্যগ্রন্থ সহ আরো কিছু অগ্রন্থিত ও অনূদিত কবিতা নিয়ে কাব্যসমগ্র প্রকাশিত হয়। নব্বইয়ের দশক থেকে ঢাকার আগামী প্রকাশনী তার গ্রন্থাবলীর প্রধান প্রকাশক ছিল।

গল্প

হুমায়ুন আজাদ সর্বপ্রথম একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে স্কটল্যান্ড থেকে এসে, গল্পটির নাম তিনি দিয়েছিলেন অনবরত তুষারপাত। এই গল্পটি তিনি পরে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকাতে ১৯৭৯ সালে প্রকাশ করেছিলেন। এই গল্পটি সহ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত লেখা আরও পাঁচটি গল্প তিনি যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৬) বইতে সংকলিত করেছিলেন। এরপর তিনি শিশুকিশোরদের জন্য আরো তিনটি গল্প লিখেন যেগুলো তিনি কিছু শিশুতোষ কবিতা সহ বুকপকেটে জোনাকি পোকা (১৯৯৩) গ্রন্থে সংকলন করেন। তিনি বইয়ের শুরুর দিকে বলেছিলেন,[২৫]

কিশোরকিশোরীদের জন্য আমি তিন দশকে লিখেছি কিছু প্রবন্ধ, কয়েকটি কবিতা, তিনটি গল্প। প্রবন্ধগুলো একটু অন্য ধরনের; শব্দ, ভাষা, আর কবিতা সম্পর্কে; তাতে স্বপ্নের কথা আছে বেশি করে। কবিতাগুলোতেও তাই; গল্পগুলোতেও। এগুলোকে এক বইতেই রাখলাম, কেননা এটা স্বপ্নের বই। এগুলোকে গদ্যে লিখেছি বা ছন্দে লিখেছি, তবে এগুলো একই স্বপ্নে লেখা।

উপন্যাস

হুমায়ুন আজাদের লেখা প্রথম উপন্যাস ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল (১৯৯৪), যেটির প্রেক্ষাপট ছিলো ১৯৮০-এর দশক এবং উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র রাশেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যে বাংলাদেশের সমাজে চলা পরিবর্তন অবলোকন করে

মূলত কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক হলেও হুমায়ূন আজাদ ১৯৯০-এর দশকে ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৪ সালে মৃত্যু অবধি তার প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ছিলো ১২টি।

১৯৯৪ সালে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন প্রথম উপন্যাস ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল-এর মধ্যে দিয়ে।[বিদ্র ৩] বাংলাদেশের সামরিক শাসন প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটি তিনি উৎসর্গ করেছেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রাশেদকে, তার বাবার নামও ছিলো রাশেদ, তিনি উপন্যাসের উৎসর্গ পাতায় এভাবে লিখেছিলেন,

উৎসর্গ পরলোকগত পিতা, আমি একটি নাম খুঁজছিলাম, আপনার নামটিই-রাশেদ-মনে পড়লো আমার।[২৭]

১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় নারী-পুরুষের মধ্যেকার শারীরিক ও হৃদয়সম্পর্কের নানা আবর্তন এবং পরিণতির আখ্যানমূলক উপন্যাস সব কিছু ভেঙে পড়ে[২৮] সব কিছু ভেঙে পড়ের পর তিনি মানুষ হিসেবে আমার অপরাধসমূহ উপন্যাস লিখেছিলেন যেটি ছিলো একজন সরকারি কর্মকর্তার তার বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করা নিয়ে এবং তিনি এ-উপন্যাসটি বাংলাদেশের খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির উল ইসলামকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন।

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত উপন্যাস কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ-এ হুমায়ুন আজাদ হাসান রশিদ নামের একজন কল্পিত বাঙালি কবির একজন বিবাহিত নারীর সাথে বিয়ে ছাড়া একত্রবাসের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।

২০০২ সালে প্রকাশিত ১০,০০০, এবং আরো ১টি ধর্ষণ ছিলো বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের একটি ধর্ষিত মেয়ের জীবন নিয়ে যে তার ধর্ষণের ফসল বাচ্চাকে হত্যা করে।

২০০৪ সালে প্রকাশিত পাক সার জমিন সাদ বাদ ছিলো ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে এবং একটি খুনের স্বপ্ন উপন্যাস ছিলো একজন তরুণের অপর একটি তরুণীর জন্য ভালোবাসার কাহিনী নিয়ে। পাক সার জমিন সাদ বাদে তিনি মৌলবাদে দীক্ষিত এক পুরুষকে সবার শেষে প্রেমের কাছে পরাজিত করান। দেখান যে কণকলতা নামের তরুণীর জন্য উপন্যাসের প্রধান নায়ক অপরাধ-জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে আর একটি খুনের স্বপ্নতে তিনি নায়িকা সুফিয়ার জন্য নায়কের অন্ধ প্রেমকেই করে তুলেছিলেন প্রধান উপজীব্য বিষয় যে নায়ক পরে নায়িকাকেই খুন করার চিন্তা করে। একটি খুনের স্বপ্ন উপন্যাসটি হুমায়ুন আজাদ তার নিজেরই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের (১৯৬৪-১৯৬৮) স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে লিখেছিলেন।

হুমায়ুন আজাদ ফালি ফালি ক’রে কাটা চাঁদ (২০০১) উপন্যাসে শিরিন নামের এক কল্পিত ব্যক্তিত্ব সম্পন্না নারীর অবতারণা করেছেন এই মনে করে যে মানসিক সম্পর্ক রাখা একটি গভীর আস্থার ব্যাপার। উপন্যাসটি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী নারীবাদের একটি চিত্র তুলে ধরে। শিরিনের স্বামী রয়েছে যার নাম দেলোয়ার কিন্তু সে একদা খালেদ নামের এক পুরুষের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় নিজের এক প্রকারের সম্মতিতেই। শিরিন পরে তার স্বামী দেলোয়ারের সঙ্গে বাস করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয় এবং খালেদ তাকে প্রেম প্রস্তাব দিলে সেটাও প্রত্যাখ্যান করে।[২৯]

এছাড়াও নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু উপন্যাসটি ছিলো একজন কিশোর-বালকের কাহিনীর ভেতর দিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রচিত উপন্যাস, যেখানে কিশোর-বালকটি গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়। নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু উপন্যাসটিকে তিনি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপন্যাস মনে করতেন। তুলনা করতে গিয়ে এই উপন্যাসকে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর উপন্যাসের তুলনায় অনেক ভালো উপন্যাস বলে মনে করেছিলেন। পথের পাঁচালীর অপু চরিত্রের সঙ্গে নিজের জীবনের মধুর জলকদর চরিত্রকে তুলনা করতে গিয়ে জলকদর চরিত্রকেই অনেক বেশি শিল্পোত্তীর্ণ চরিত্র মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেছিলেন যে, জলকদরের ভিতর দিয়ে তিনি নিজের কৈশোরজীবনকে দেখেছিলেন।[২৯] নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু উপন্যাসটির আগে কিশোরদের জন্য হুমায়ুন আজাদ এর আগে আব্বুকে মনে পড়ে নামে একটি উপন্যাসিকা লিখেছিলেন যেটা ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো এবং আমাদের শহরে একদল দেবদূত নামের আরো একটি কিশোর-উপন্যাসিকা ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।

ভাষাবিজ্ঞান গবেষণা

১৯৬০-এর দশকে আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন পশ্চিমের ভাষাবিজ্ঞানী চম্‌স্কি-উদ্ভাবিত রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ তত্ত্বটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আজাদ এই তত্ত্বের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার রূপমূলতত্ত্ব তথা বাক্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন। এর মাধ্যমে বাংলার ভাষাবিষয়ক গবেষণায় আধুনিক ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূত্রপাত ঘটে। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল প্রোনোমিনালাইজেশান ইন বেঙলি (অর্থাৎ বাংলা সর্বনামীয়করণ)। পরবর্তীতে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে একই শিরোনামের এটি ইংরেজি ভাষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা ভাষার বাক্যতত্ত্বের ওপর বাক্যতত্ত্ব নামে একটি বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন। একই সালে বাংলা একাডেমি থেকে তিনি বাঙলা ভাষা শিরোনামে দুই খণ্ডের একটি দালীলিক সঙ্কলন প্রকাশ করেন, যাতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিগত শতাধিক বছরের বিভিন্ন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকের লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা সংকলিত হয়। এই তিনটি গ্রন্থ বাংলা ভাষাবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে বিবেচিত। তিনি পরবর্তীকালে তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান (১৯৮৮) ও অর্থবিজ্ঞান (১৯৯৯) শিরোনামে দুইটি সংক্ষিপ্ত প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক লেখেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি বাংলা ভাষার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে মৃত্যুর কারণে তার এই আগ্রহ বাস্তবায়িত হয় নি।

প্রবন্ধ

লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী (১৯৭৬)

১৯৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত 'লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী' বইটি ছিলো হুমায়ুন আজাদের দ্বিতীয় প্রবন্ধ, এর আগে তিনি 'রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা' (১৯৭৩) নামের একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন।

১৯৯২ সালে প্রকাশিত নারী স্বাধীন বাংলাদেশে নারীবাদ বিষয়ক প্রথম বই।[৩০] এই প্রবন্ধগ্রন্থের জন্য তিনি তীব্র সমালোচিত হন। ফলে ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়[৩১] এবং প্রায় সাড়ে চার বছর পরে ২০০০ সালের ৭ মার্চ উচ্চবিচারালয় বইটির নিষিদ্ধকরণ আদেশ বাতিল করে।[৩২]

ফরাসি নারীবাদী দার্শনিক সিমোন দ্যা বোভোয়ারের ১৯৪৯ সালের গ্রন্থ দ্বিতীয় লিঙ্গ হুমায়ুন আজাদ ২০০১ সালে বাংলায় অনুবাদ করেন। সিমোন দ্যা বোভোয়ারের লেখা তাকে নারীবাদের প্রতি অনেক আকৃষ্ট করেছিল।[বিদ্র ৪]

ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে প্রকাশিত আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম গ্রন্থে তিনি তার স্বপ্নের বাংলাদেশের করুণ অবস্থা দেখে ব্যথিত হয়েছিলেন। বইটিতে তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে তিনি যেরকম প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন তার স্বপ্ন আগেই ভেঙে গেছে, তিনি বাংলাদেশের সমাজের অধঃপতন খুবই আক্ষেপের সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন।[৩২][৩৪] তাছাড়া ২০০০ সালে প্রকাশিত মহাবিশ্ব ছিলো একটি বিজ্ঞান-প্রবন্ধ।

ব্যক্তিগত জীবন

হুমায়ুন আজাদ ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সময় লতিফা কোহিনুর নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচিত হন এবং ১৯৭৫ সালের ১২ই অক্টোবর তাদের বিয়ে হয় টেলিফোনে; আজাদ তখন স্কটল্যান্ডে আর লতিফা বাংলাদেশে ছিলেন।[৩৫][বিদ্র ৫] তাদের দুই কন্যা মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ এবং এক পুত্র অনন্য আজাদ। জ্যেষ্ঠ কন্যা মৌলি আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সহকারী সচিব হিসাবে দায়িত্বরত।

বিশ্বাস ও দর্শন

আজাদ ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না এবং তিনি সরাসরি ধর্মের সমালোচনা করে লেখেননি তবে ধর্মীয় মৌলবাদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করতেন এবং এটি বিভিন্ন ভাবে তার লেখায় প্রকাশ পেয়েছে।[৩৭] তিনি বাংলাদেশের সমাজে চলা রক্ষণশীলতা এবং প্রথার বিরোধিতা করতেন।[৩৮] সর্বপ্রথম গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের আদলে ১৯৯১ প্রকাশিত প্রবচনগুচ্ছ ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল। হুমায়ুন আজাদের লেখালেখিতে উদারপন্থা, বিজ্ঞানমনস্কতার এবং একই সঙ্গে দ্রোহের ছাপ স্পষ্ট ছিলো। একটি বৈষম্যহীন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার স্বপ্ন তিনি দেখতেন। তিনি তার লেখনীতে প্রকাশ করেছিলেন,

আমি এমন একটি সমাজ চাই যে সমাজ বলা যাক পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজের চূড়ান্ত রূপ। সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নে বিভোর আমি নই, আমি চাই সবাই সচ্ছল থাকবে - জ্ঞানচর্চা, আনন্দ, উল্লাস এবং যতপ্রথা রয়েছে সেসব অতিক্রম করে মানুষ সম্পূর্ণ মানবিক জীবন যাপন করবে।[বিদ্র ৬]

রাজনৈতিক-সামাজিক সমালোচনা

১৯৮০-র দশকের শেষভাগ থেকে হুমায়ুন আজাদ সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। এ সময় তিনি খবরের কাগজ নামীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখতে শুরু করেন। সামরিক শাসনের বিরোধিতা দিয়ে তার রাজনৈতিক লেখালিখির সূত্রপাত। মাতাল তরণী (১৯৯২) ছিলো তার রাজনৈতিক-সমাজ সমালোচনার সংকলনগ্রন্থ।

হত্যা প্রচেষ্টা

২০০৩ সালে ইত্তেফাক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল। ২০০৪-এর একুশে বইমেলাতে উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়, এবং বিভিন্ন স্থানে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। তিনি এই উপন্যাসটিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে পরোক্ষভাবে ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এর কঠোর সমালোচনা করেন, উপন্যাসটি তিনি ১৯৭১ সালেকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন। তারই জের ধরে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে আজাদ প্রথমে বাংলাদেশের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকাতে চিকিৎসা লাভ করেন যেখানে প্রধানমন্ত্রী তাকে দেখতে গিয়েছিলেন[৪০], পরে হুমায়ুন আজাদকে সরকারিভাবেই থাইল্যান্ডে পাঠানো হয় এবং তিনি সেখান থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। হুমায়ুন আজাদের উপর কারা হামলা করেছিলো তা অনেক দিন ধরে অজানা ছিলো; জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ সংক্ষেপে জেএমবি নামক ইসলামি জঙ্গী সংগঠনের একজন শীর্ষনেতা শায়খ আব্দুর রহমান পরবর্তীতে হুমায়ুন আজাদ এবং একইসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইউনুসকে হত্যার নির্দেশ দেবার কথা স্বীকার করেছিলো।[৪১] এই হত্যা প্রচেষ্টার মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য উচ্চ আদালত ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে আদেশ প্রদান করে।

সমালোচনা

২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জাতীয় সংসদে হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪)[৩১] উপন্যাসটিকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য দেন এবং এ ধরনের লেখকদের লেখা বন্ধ করতে ব্ল্যাসফেমি আইন (ধর্ম অবমাননা বিরোধী আইন) প্রণয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।[৪২] এই উপন্যাসটিতে হুমায়ুন আজাদ তীব্র রূপক-ঋণাত্মক ভাবে বাংলাদেশের একটি কাল্পনিক মৌলবাদী সংগঠনের চিত্র তুলে ধরেছিলেন।

পুরস্কার এবং সম্মাননা

পুরস্কারের তালিকা
পুরস্কার বছর পুরস্কারের ক্ষেত্র মন্তব্য
বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৮৬ সামগ্রিক অবদান [৪৩]
অগ্রণী ব্যাংক-শিশু সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৬ শিশু সাহিত্য
মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার ২০০৪
একুশে পদক ২০১২ ভাষা ও সাহিত্য মরণোত্তর[৪৪]

মৃত্যু

২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।[৪৫]

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট আবাসস্থলের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর জার্মান সরকারের তত্ত্বাবধানে মিউনিখে তার নিজ বাসভবনে পাওয়া সব জিনিসপত্র ঢাকায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। ওই জিনিসপত্রের ভেতরেই পাওয়া যায় তার হাতের লেখা তিনটি চিঠি। চিঠি তিনটি আলাদা তিনটি পোস্ট কার্ডে লিখেছেন বড় মেয়ে মৌলিকে, ছোট মেয়ে স্মিতাকে এবং একমাত্র ছেলে অনন্য আজাদকে। অনুমান করা হয়, ওই লেখার অক্ষরগুলোই ছিল তার জীবনের শেষ লেখা।[৪৬] তার মরদেহ কফিনে করে জার্মানি থেকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাযার নামাজ শেষে তার মরদেহ রাড়িখালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয় এবং পরে তার কবর সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে একটি বইয়ের মত করে বানানো হয়।[৪৭]

টীকা

  1. আমার বাবার নাম আবদুর রাশেদ, মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। আমি তাদের দ্বিতীয় পুত্র, ও তৃতীয় সন্তান। তাদের প্রথম পুত্রটি জন্মের পরেই ম'রে গিয়েছিলো, আমি তাই প্রথম পুত্ররূপে গণ্য হয়েছি..।: (প্রাথমিক উৎস)[৭]
  2. আমি কিশোর বয়স থেকেই লিখছি, তবে কবি হিসেবে আমি নিজেকে মনে করি ষাটের দ্বিতীয়ার্ধের। ছাত্রজীবনে আমি যা কিছু লিখেছি তা সাহিত্যের জন্য ভালোবাসার কাতর প্রকাশ [.....................] ১৯৭৩-এ আমি যখন ছাব্বিশ তখন বেরোয় অলৌকিক ইস্টিমার।: (প্রাথমিক উৎস)[২৪]
  3. আমার একটি নতুন পরিচত এ-বছর থেকে শুরু হলো, এখন আমি নামের আগে ঔপন্যাসিক অভিধাটিও দেখি, দেখে আমার বেশ মজা লাগে, অনেকক্ষণ ধরে আমি বুঝতে পারিনা ঐ নামটি আমার কিনা? যখন নিশ্চিত হই নামটা আমারই তখন মজা লাগে।: (প্রাথমিক উৎস)[২৬]
  4. আমি দ্য বোভোয়ার, মিলেট, ফ্রাইডান, গ্রিয়ার, ও অন্যান্যদের বইয়ের পর বই পড়তে থাকি, বোধ করতে থাকি অসামান্য অনুপ্রেরণা।: (প্রাথমিক উৎস)[৩৩]
  5. ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এম.এ. ক্লাশে পড়ার সময় আমার মা বাবার প্রথম পরিচয় হয়।. . .মাকে পাবার জন্য বাবা ছিলেন এককথায় নাছোড়বান্দা। মা প্রথম প্রথম রাগ করলেও ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। . . .শুনেছি মা’র পরিবার প্রথমদিকে বাবাকে খুব বেশি পছন্দ করেনি কিন্তু যখন তারা দেখেছে বাবা মা’র প্রতি একনিষ্ঠ তখন নানা সম্মতি দিয়েছিলেন এবং তার জন্য বাবাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ৭ বছর। তাদের যে বিয়ে হয়েছে তাও অনেকটা প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়েই। ১৯৭৫-এর ১২ অক্টোবর মা ও বাবার দুই পরিবারের সম্মতিতে টেলিফোনের মাধ্যমে বিয়ে হয়।. . .বাবা বিয়ের দিন ছিলেন স্কটল্যান্ডে আর মা ঢাকায়।: (প্রাথমিক উৎস)[৩৬]
  6. আমি এমন একটি সমাজ চাই যে সমাজ বলা যাক পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজের চূড়ান্ত রূপ। সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নে বিভোর আমি নই, আমি চাই সবাই সচ্ছল থাকবে - জ্ঞানচর্চা, আনন্দ, উল্লাস এবং যতপ্রথা রয়েছে সেসব অতিক্রম করে মানুষ সম্পূর্ণ মানবিক জীবন যাপন করবে।: (প্রাথমিক উৎস)[৩৯]

তথ্যসূত্র

  1. মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম (২০১২)। "আজাদ, হুমায়ুন"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. "হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় সাঈদী গ্রেপ্তার"bangla.bdnews24.com। ২০২১-০১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১২ 
  3. আজাদ ২০১১, পৃ. ১১: আজাদের জন্ম দক্ষিণ রাঢ়িখাল গ্রামে নয় (অনেকেই তাই-ই ভাবেন), তার নানান বাড়ি কামারগাঁয়ে।; উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৮: আমি জন্মেছিলাম আমার নানাবাড়িতে– তখন নানাবাড়িতে জন্ম নেয়াই রীতি ছিলো–, আমাদের গ্রাম থেকে পশ্চিমে একটি গাছপালাছায়াঢাকা গ্রামে, কামারগাঁয়ে।
  4. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৩৬।
  5. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ১০।
  6. "প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ'র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি"দিবালোক। ১১ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  7. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৯।
  8. আজাদ ২০১১, পৃ. ১২: ..সেই বাল্যকাল তথা রাড়িখালের মাত্র ১৫ বছর জীবনযাপন ছিল তার জীবনের সবচেয়ে সুখকর অধ্যায়।; উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৯: ১৫ বছর পর্যন্ত আমি বড় হয়েছি আমাদের গ্রামে রাড়িখালে।
  9. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ১১: আমার বাল্যকাল আমার লেখায় নানাভাবে এসেছ,– ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু, শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা এবং আরো নানা বইতে আমি আমার বাল্যকালকে ধরে রাখতে চেয়েছি। (প্রাথমিক উৎস)
  10. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ১২: আমাদের গ্রামের মাইল দুয়েক দক্ষিণ দিয়ে বয়ে যায় পদ্মা, তখন বিশাল ছিলো; এপার থেকে ওপার ১২ মাইল শুনেছি। ওই পদ্মানদী দিয়ে রাতের বেলা ইস্টিমার যেতো, ভাগ্যকূলে ভিড়তো; কতো রাতে ঘুম ভেঙে গেছে আমার ইস্টিমারের সিঁটিতে। ঘুম ভেঙে মনে হতো কোন সুদূর থেকে ভেসে আসে এই ধ্বনি, আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকতাম। আমার প্রথম কবিতার বইয়ের নাম রেখেছিলাম অলৌকিক ইস্টিমার, কেননা আজো আমি পদ্মায় মধ্যরাতের জাহাজের সিঁটি শুনি।
  11. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ১২-১৩: আমি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই সবচেয়ে নিচের ক্লাশে, তার নাম ছিলো 'ইনফ্যান্ট ক্লাশ'..।
  12. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ১৬।
  13. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ১৬-১৭।
  14. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ২৩।
  15. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৪০: প্রবেশিকা পাঠ করার পর আমি ঠিক করেছিলাম এইসএসসিতে মানবিক পড়বো।.. আমি ঢাকা কলেজে বিজ্ঞানে এইসএসসি শ্রেণিতে ভর্তি হই; ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে। (প্রাথমিক উৎস)
  16. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৪২।
  17. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৪৪।
  18. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৪৫।
  19. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৪৮।
  20. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৬৩।
  21. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৫০।
  22. উদ্দিন ও বুলবুল ২০০৪, পৃ. ৩৬: কচিকাচার আসরে আমি কবিতা পাঠাই, সেগুলি ছাপা না হওয়াতে আমি ঘড়ি সম্পর্কে "ঘড়ি বলে টিক টিক" নামে একটি প্রবন্ধ পাঠাই। দেখি সেটা ছাপা হয়েছে, অনেক কিছু সংশোধন ক'রে। পরে আমার অনেক প্রবন্ধ– একটির নাম মনে পড়ছে– "ভাওয়ালের কবি গোবিন্দ দাস"– ছাপা হয় কচিকাচার আসরে। (প্রাথমিক উৎস)
  23. "উপন্যাসসমগ্র-১, হুমায়ুন আজাদ"rokomari.com 
  24. আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ) ১৯৯৫, পৃ. ৪৯।
  25. আজাদ, হুমায়ুন (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩)। বুকপকেটে জোনাকি পোকাআগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৫। 
  26. আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ) ১৯৯৫, পৃ. ১১১।
  27. আজাদ, হুমায়ুন (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪)। ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলআগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৫। 
  28. ড. জাহারাবী রিপন (আগস্ট ১১, ২০০৮)। "সব কিছু ভেঙে পড়ে : জীবনবাদী শিল্পদ্রষ্টা হুমায়ুন আজাদ"। মুন্সীগঞ্জ.কম। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৪, ২০১৭ 
  29. "সাহস ও সৃষ্টির অদম্য লেখক হুমায়ুন আজাদ"arts.bdnews24.com। ৩১ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৯ 
  30. মৌলি আজাদ (১৬ জুলাই ২০১৫)। "আমার বাবা হুমায়ুন আজাদ"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৭ 
  31. শারমিন শামস (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "অশ্লীলতার সংজ্ঞা আর বই নিষিদ্ধের অশ্লীলতা"ntvbd.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২০ 
  32. মৌলি আজাদ (১২ আগস্ট ২০১৫)। "হুমায়ুন আজাদ, ভেতর-বাহিরে"ntvbd.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৭ 
  33. আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ) ১৯৯৫, পৃ. ৭০।
  34. রাশিদ আসকারী (মার্চ ৩, ২০১৫)। "আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?"jjdin.com। ঢাকা: যায় যায় দিন। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১০, ২০১৫ 
  35. "বইগুলো সাজিয়ে রেখেছি, শুধু তিনি নেই : লতিফা কোহিনূর"banglatribune.com। ২৮ এপ্রিল ২০২১। ৯ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২১ 
  36. মৌলি আজাদ (হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা) ২০১১, পৃ. ১৯।
  37. "প্রথাবিরোধী যোদ্ধা হুমায়ুন আজাদ"ntvbd.com। ২৮ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৭ 
  38. "সব কিছু তুচ্ছ করার সাহস ছিলো তাঁর - মৌলি আজাদ"ntvbd.com। ১২ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২০ 
  39. আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ) ১৯৯৫, পৃ. ২১।
  40. "President, PM visit Prof Azad at CMH"দ্য ডেইলি স্টার। ৪ মার্চ ২০০৪। ৪ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২০ 
  41. "জেএমবি নেতার স্বীকারোক্তি"বিবিসি। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৬ 
  42. "হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় সাঈদীর রিমান্ড"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১ আগস্ট ২০১০। ৬ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০২০ 
  43. "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার"banglaacademy.portal.gov.bdবাংলা একাডেমি। ১৪ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯ 
  44. একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান (পিডিএফ)সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পৃষ্ঠা ২। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৪ 
  45. "হুমায়ুন আজাদ"। samakal.com.bd। ৬ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৭ 
  46. "হুমায়ুন আজাদক"। thedailysangbad.com। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৭ 
  47. "বাবার স্বপ্ন ছিল সেক্যুলার বাংলাদেশ : মৌলি আজাদ"ntvbd.com। ১২ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৭ 

উৎস

  • আজাদ, মৌলি (২০১১)। "বাবার বেড়ে ওঠা"। আমার বাবা (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: আগামী প্রকাশনী (প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ২০১১)। পৃষ্ঠা ১১। আইএসবিএন 978-98404-1380-5 
  • উদ্দিন, জামাল; বুলবুল, শরীফা, সম্পাদকগণ (২০০৪)। এই বাঙলার সক্রেটিস (প্রথম সংস্করণ)। চট্টগ্রাম: বলাকা (প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ২০০৪)। পৃষ্ঠা ৮। আইএসবিএন 984-84330-1-5 
  • হুমায়ুন আজাদ (১৯৯৫)। আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: আগামী প্রকাশনী (প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫)। আইএসবিএন 978-984-04-1542-7 

বহিঃসংযোগ